সোনা-হিরে সমেত ব্যাগ ফেরালেন পঞ্চায়েত কর্মী

ফজলুরের বাড়ি বলরামবাটিতে। সিঙ্গুরে তাঁর সোনার দোকান। মঙ্গলবার দুপুর বারোটা নাগাদ তিনি মোটরবাইক নিয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:০৬
Share:

সহায়: বেচারাম পাত্র। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার ধারে ব্যাগটা পড়ে থাকতে দেখে পঞ্চায়েতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বেচারাম পাত্রের মনে হয়েছিল, ভিতরে কারও প্রয়োজনীয় জিনিস থাকতে পারে! সেই কথা ভেবেই সাইকেল থামিয়ে ব্যাগটা কুড়িয়ে নিয়ে প্রৌঢ় বেচারাম সটান হাজির পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে। ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে এল হিরে এবং সোনার গয়না, নগদ টাকা। ব্যাগ থেকে পাওয়া গেল মালিকের ঠিকানা, ফোন নম্বরও। তার মাধ্যমে খোঁজ মিলল মালিকের। কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাগের মালিক সিঙ্গুরের পলতাগড়-বাড়ুইপাড়া পঞ্চায়েতে এসে নিয়ে গেলেন ব্যাগ।

Advertisement

ব্যাগ যথাস্থানে পৌঁছতেই বেচারাম হাঁফ ছাড়লেন। বললেন, ‘‘যাঁর জিনিস হারিয়েছিল, ভাবুন তো কী অবস্থা হয়েছিল তাঁর!’’ ব্যাগের মালিক ফজরুল রহমন মল্লিকের গলায় অবশ্য বিস্ময়, ‘‘আজকের দিনে এমন লোকও হয়! ভাগ্যিস বেচারামবাবুর মতো লোকের হাতে ব্যাগটা পড়েছিল।’’

ফজলুরের বাড়ি বলরামবাটিতে। সিঙ্গুরে তাঁর সোনার দোকান। মঙ্গলবার দুপুর বারোটা নাগাদ তিনি মোটরবাইক নিয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে বলরামবাটি স্টেশনের কাছে তাঁর সঙ্গে থাকা গয়নার ব্যাগটি কোনও ভাবে পড়ে যায়। বেচারামও বলরামবাটির বাসিন্দা। ঘণ্টাখানেক বাদে তিনি সাইকেলে চেপে ওই রাস্তা ধরে পঞ্চায়েতে কাজে যাচ্ছিলেন। তখনই ব্যাগটি নজরে পড়ে তাঁর। ব্যাগ কুড়িয়ে পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেব বাড়ের কাছে নিয়ে যান তিনি।

Advertisement

জয়দেববাবু জানান, ব্যাগ খুলতেই দেখা যায় এক জোড়া সোনার বালা, চার জোড়া কানের দুল, বেশ কয়েকটি হিরের গয়না এবং নগদ কয়েক হাজার টাকা রয়েছে তাতে। এ ছাড়াও ছিল ব্যাঙ্কের বই, আধার কার্ড। নথি থেকে পাওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করে প্রধান ফজরুলকে খবর দেন। দ্রুত পঞ্চায়েতে আসেন ওই স্বর্ণ-ব্যবসায়ী। ব্যাগ পেয়ে ধড়ে প্রাণ ফেরে তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘দোকানে গিয়ে ব্যাগের কথা মনে পড়ে। ভেবেছিলাম, আর বোধহয় ব্যাগটা পাবই না। বেচারামবাবুর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’

পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেববাবু জানান, তিন বছর ধরে বেচারামবাবু এখানে কাজ করছেন। কয়েক মাস পরে অবসর নেবেন। প্রধানের কথায়, ‘‘ওঁর সততায় মুগ্ধ হলাম। শুধু নিজের নয়, উনি আমাদের পঞ্চায়েতেরও মুখ উজ্জ্বল করলেন। এমন মানুষ আমাদের গর্ব।’’

আর বেচারামের বক্তব্য, এমন পরিস্থিতি হলে ফের একই কাজ করবেন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘যাঁর জিনিস, তাঁর কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই শান্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন