পান্ডুয়ায় সরকারি জমিতে কার্যালয় বিজেপিরও

রেল জমি দখল করে পার্টি অফিস

হুগলির পান্ডুয়ায় যত্রতত্র চোখে পড়ছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক কার্যালয়। সরকারি-বেসরকারি জমি দখল করে বানানো পাকা বা টিনশেড ঘরের সামনে সাইনবোর্ড। ড্রেন, খাল, নদী, রাস্তা, ফুটপাথ কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এগুলোই স্থানীয়ভাবে ‘পার্টি অফিস’ নামে পরিচিত। রাজনৈতিক পরিচয়ে এই ঘরগুলোতে নিয়মিত বসছেন কিছু ব্যক্তি। সেখান থেকেই চলছে এলাকা শাসন।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০৩:২২
Share:

জিটি রোডের পাশে সরকারি জমিতে বিজেপি কার্যালয় ।

চুরি হয়ে গেছে সরকারি জমি।

Advertisement

খাতায় কলমে জমির মালিক রেল দফতর। অভিযোগ, সেখানেই মাথা তুলেছে শাসক দলের পার্টি অফিস। শুধু সেখানেই নয়, জিটি রোডের পাশে সরকারি জমিতেও গজিয়ে উঠেছে তাদের অফিস। শুধু শাসক দল নয়, কম যান না বিরোধীরাও। সরকারি জমিতে দখল করে পার্টি অফিস তৈরির অভিযোগ উঠেছে বিজেপি ও সিপিএমের বিরুদ্ধেও।

হুগলির পান্ডুয়ায় যত্রতত্র চোখে পড়ছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক কার্যালয়। সরকারি-বেসরকারি জমি দখল করে বানানো পাকা বা টিনশেড ঘরের সামনে সাইনবোর্ড। ড্রেন, খাল, নদী, রাস্তা, ফুটপাথ কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এগুলোই স্থানীয়ভাবে ‘পার্টি অফিস’ নামে পরিচিত। রাজনৈতিক পরিচয়ে এই ঘরগুলোতে নিয়মিত বসছেন কিছু ব্যক্তি। সেখান থেকেই চলছে এলাকা শাসন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পান্ডুয়া স্টেশনের পাশে রেলের জমি দখল করে তৃণমূলের অফিস তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। এখন সেটাই পান্ডুয়া ব্লক তৃণমূলের কার্যালয়। এই বছর মে মাসের মাঝামাঝি পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালের কাছে জিটি রোডের ধারে আরও একটি অফিস তৈরি করেছে তৃণমূল। অভিযোগ, সেটিও তৈরি হয়েছে সরকারি জমিতে। অভিযোগের তালিকা এখানেই শেষ নয়। চলতি জুন মাসেই স্থানীয় কলবাজার এলাকায় একটি বন্ধ রাইস মিল দখল করে অফিস তৈরির অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে। সেখানে দলীয় পতাকা তুলে খাওয়াদাওয়াও হয়েছিল। মিলের মালিক জেলা পুলিশে বিষয়টি জানান। তার পর পুলিশের নির্দেশে দলীয় পতাকা খুলতে বাধ্য হন তৃণমূল নেতারা। শুধু তৃণমূল নয়। সরকারি জমিতে দলীয় অফিস তৈরিতে অভিযুক্ত বিজেপিও। জিটি রোডের ধারে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালের পাশে গেলেই দেখা মিলবে বিজেপির পার্টি অফিস।

তবে এত কিছুর পরেও সরকারি জমি দখলের অভিযোগ মানতে রাজি নয় কোনও পক্ষ। পান্ডুয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনিসুল ইসলামের দাবি, ‘‘পান্ডুয়ায় সরকারি জায়গায় আমাদের দলের কোনও পার্টি অফিস নেই। রেল স্টেশনের কাছে আমাদের অফিস ছিল। কিন্তু রেল সেটি নিয়ে নিয়েছে। এখন রেলের জায়গায় আমাদের কোনও পার্টি অফিস নেই। তবে সিপিএম এবং বিজেপি সরকারি জমিতে পার্টি অফিস তৈরি করেছে।’’


বেআইনি: রেলের জায়গা দখল করে তৃণমূল কার্যালয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা হুগলি জেলার বাসিন্দা স্বপন পালের আবার দাবি, ‘‘তৃণমূল সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে জোর করে পার্টি অফিস তৈরি করছে। কিন্তু বিজেপি সরকারি জমিতে পার্টি অফিস তৈরি করেনি।’’ পান্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনও সরকারি জমিতে দলীয় অফিস তৈরির অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘পান্ডুয়ায় আমাদের দলের কোনও পার্টি অফিস সরকারি জায়গায় নেই। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন সরকারি জমিতে সিপিএমের পার্টি অফিস রয়েছে তাহলে সেটি ভেঙে দেওয়া হবে।’’

রেলের জমিতে পার্টি অফিস থাকার বিষয়ে পূর্ব রেলের মূখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানান, রেলের জমি দখল করে থাকা রাজনৈতিক দলের অফিসগুলি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়টিতে মান্যতা দিয়েছেন পান্ডুয়া ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদেরও নজরে রয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন