শ্রীরামপুর-ব্যারাকপুর পারাপার

যাত্রী-দুর্ভোগ চলছেই, ফেরি পারাপার শীঘ্রই

বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের দফতরে এ নিয়ে এক বৈঠক হয়। সেখানে জেলাশাসক ছাড়াও ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিইও কে আনন্দ এবং  পরিবহণ ও পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর ও ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪২
Share:

স্তব্ধ: এই জেটিই আপাতত বন্ধ রয়েছে। শ্রীরামপুরে। নিজস্ব চিত্র

ভুটভুটি চলাচলের উপযুক্ত শংসাপত্র জমা পড়েনি, এই যুক্তি দেখিয়ে ব্যারাকপুরের ধোবিঘাট ইজারাদারকে এখনও হস্তান্তর করেনি ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। ফলে, বুধবার পর্যন্ত চালু হয়নি শ্রীরামপুর-ব্যারাকপুর ফেরি পারাপার। যাত্রীদের দুর্ভোগ অব্যাহত। তবে, দু’এক দিনের মধ্যেই ফের চলাচল শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।

Advertisement

বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের দফতরে এ নিয়ে এক বৈঠক হয়। সেখানে জেলাশাসক ছাড়াও ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিইও কে আনন্দ এবং পরিবহণ ও পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা ছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে ওই বোর্ড জানায়, নিরাপত্তার কথা ভেবেই জেটি এবং ভুটভুটির শংসাপত্র না-পেলে ফেরি চলাচল শুরু করতে তাদের আপত্তি রয়েছে। এ ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ কথা জানানোর পরেই প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ঠিক হয়, দু’তিন দিনের মধ্যে ভুটভুটিই চালানো শুরু করা হবে। ‘জলধারা’ প্রকল্পের যন্ত্রচালিত বিশেষ নৌকা মার্চ মাসের মধ্যে চলে আসার কথা। তখন ভুটভুটি বাতিল করা হবে। মার্চ থেকে রাজ্য সরকারের জলপথ পরিবহণ নিয়ে পরিকল্পনামতো ফেরি পারাপার হবে।

দু’মাস আগে ব্যারাকপুর ঘাটে অস্থায়ী জেটি সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। পরে, উল্টো দিকের শ্রীরামপুর যুগল আঢ্য ফেরিঘাটও সংস্কার করা হয়। সম্প্রতি দু’পারেরই কাজ শেষ হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে দু’পারের মধ্যে ফেরি চলাচল শুরু করা হবে বলে প্রথমে শ্রীরামপুর পুরসভা এবং ঘাট কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ফেরি চলেনি। তার আগের সন্ধ্যাতেই সেনাবাহিনীর তরফে আপত্তির কথা জানতে পেরে আতান্তরে পড়েন ঘাটের ইজারাদার শ্রীরামপুরের তপন বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

তপনবাবু মানছেন, ভুটভুটি আইনসিদ্ধ জলযান নয়। প্রশাসনিক ভাবে এর ছাড়পত্র হয় না। ফলে, কী করে সেনাবাহিনীকে সন্তুষ্ট করবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না তিনি। দ্বারস্থ হন প্রশাসনের। শ্রীরামপুর পুরসভা এবং ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড তিন বছর অন্তর পালা করে ঘাটের ইজারা দেয়। তপনবাবু জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ (২৭ মাস) পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড তাঁকে ওই ঘাট ইজারা দিয়েছে। ইজারা বাবদ ৭৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার অর্ধেক গত ৩০ ডিসেম্বর তিনি জমা দিয়েছেন।

তপনবাবু বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই ভুটভুটির ফিটনেস সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। আমাদের ভুটভুটিগুলোর হাল যথেষ্ট ভাল। কিন্তু তার সার্টিফিকেট পাব কোথায়? রাজ্য সরকার ভুটভুটি তুলে দেওয়ার সময়সীমা ধার্য করেছে এই বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। সেই মতো পরিকল্পনা করেছি আমরা।’’ তিনি আরও জানান, স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন কর্মী আছেন এই ঘাটে। ঘাট না-খোলায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

ঘাট কর্তৃপক্ষের তরফে বিষয়টি শ্রীরামপুরের স্থানীয় কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহকে জানানো হয়। সন্তোষবাবু পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন।

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া থেকে বিভিন্ন পেশার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন দুই ঘাট পারাপার করেন। শ্রীরামপুরের দেবাংশু মণ্ডল, প্রিয়াংশু মণ্ডল ব্যারাকপুরের স্কুলে পড়ে। বৃহস্পতিবার স্কুল খুলছে। দেবাংশুদের বক্তব্য, ‘‘ফেরি না চললে অনেকটা ঘুরপথে যেতে হবে।’’ শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবী শেখ আফজলউদ্দিন বুধবার ঘাটে এসে দেখেন, ফেরি বন্ধ। তিনি বলেন, ‘‘কাজের সূত্রে মাঝেমধ্যেই ব্যারাকপুর বা বারাসত কোর্টে যাই। আজ বারাসতে যাচ্ছি। এখন অনেকটা ঘুরে যেতে দেরি হয়ে যাবে। ঘাট বন্ধ থাকায় সকলেরই সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে কিছু একটা ব্যবস্থা করা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন