চাক্ষুষ: বাসের মাথায় চেপে যাতায়াত। দর্শক পুলিশ। বুধবার সকালে ব্যান্ডেল মোড়ে। নিজস্ব চিত্র
যেতে হবে বেনাপুর।
তাই বেনাপুর-বাগনান রুটের একটি ছোট গাড়িতে উঠতে গিয়েছিলাম। ভিতরে ভিড়ে ঠাসা। বসার জায়গা নেই। উপায় বাতলালেন চালক, ‘‘নিশ্চিন্তে ছাদে উঠুন।’’
—যদি পুলিশ ধরে?
‘‘সে দায়িত্ব আমার’’— চালকের অভয়বাণী।
হাওড়া জেলা জুড়ে চলছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার। পুলিশ সদলবলে মাঠে নেমে পড়েছে হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের ধরতে। কিন্তু দিনভর ট্রেকার, অটো, ছোট গাড়ির ছাদে উঠে বা পিছনে ঝুলে যে যাত্রীরা ঝুঁকির যাতায়াত করছেন, তাতে পুলিশের নজর কই?
এ নিয়ে জেলা পুলিশের মধ্যেই দু’রকম মত রয়েছে। পুলিশের একাংশের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর অভিযান শুধুমাত্র মোটরবাইকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে আপত্তি আছে। তাঁদের বক্তব্য, ওই অভিযানে কিছু প্রাণ বাঁচানো যায় ঠিকই। কিন্তু ছোট গাড়ি বা অটো-ট্রেকারে নজরদারি না-করার ফলে ওই সব চালকেরা লাগামছাড়া হয়ে উঠেছেন। তাই অভিযান চালিয়ে তাঁদেরও ধরা উচিত।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মার দাবি, ‘‘শুধু মোটরবাইক নয়, সব ধরনের গাড়ির উপরেই পুলিশের নজরদারি চলে। কঠোর নজরদারির ফলেই মুম্বই রোডে বাসের ছাদে আর কোনও যাত্রী ওঠেন না।’’
পুলিশকর্তা ওই দাবি করলেও বাগনান, আমতা, সাঁকরাইল, ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর— সর্বতেরই গ্রামীণ এলাকায় পরিবহণ ব্যবস্থায় ওই ছবিটা প্রতিদিনেরই। বাগনান থেকে বাকসি, কুলিয়াঘাট, হাল্যান প্রভৃতি রুটে প্রায় ৫০০ ছোট গাড়ি এবং অটো চলে। প্রায় প্রতিটি গাড়িতেই দেখা যায় যাত্রীরা ঝুলছেন বা ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে। যাত্রীর ভারে কাত হয়ে চলছে গাড়িগুলি। ওই সব অটো এবং ছোট গাড়িগুলির বেশির ভাগেরই কোনও লাইসেন্স নেই বলে পুলিশই মানছে। মাঝেমধ্যেই এ ভাবে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু হতাহতেরা কোনও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না।
আমতা থেকে মুন্সিরহাট পর্যন্ত চলে ট্রেকার। একই ছবি দেখা যায় এখানেও। আমতা থেকে উদয়নারায়ণপুর, সাঁকরাইল থেকে মুন্সিরহাট, বীরশিবপুর থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত ট্রেকারেও ছাদে যাত্রী তোলা হয়। রাজাপুর-মুন্সিরহাট রুটে ট্রেকার দুর্ঘটনায় আগে একাধিক মৃত্যুও হয়েছে। কেন এই ঝুঁকির যাত্রা আটকানো যায় না?
চালকেরা দুষছেন যাত্রীদের মানসিকতাকে। অশোক দলুই নামে বাগনানের এক অটো-চালক বলেন, ‘‘এক শ্রেণির যাত্রী ঝুলে বা ছাদে উঠে যেতে পছন্দ করেন। তাঁদের আমরা বারণ করি। তবুও তাঁরা ও ভাবেই যান। পুলিশ যদি নিয়মিত নজরদারি করে তা হলে এই প্রবণতা রোখা সম্ভব।’’