টাকা না মেলায় দিনভর নিশ্চয়যান বন্ধ হুগলিতে

অ্যাম্বুল্যান্স দর হাঁকল এক হাজার

নিশ্চয়যান মালিকদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত সেই টাকা মিলছে না। নিজেদের পকেট থেকে পেট্রোল কেনা থেকে চালকের খরচ — সব মেটাতে হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

হুগলি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

সার দিয়ে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে নিশ্চয়যান। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রসূতিকে নিখরচায় বাড়ি থেকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে নিশ্চয়যান। কিন্তু রবিবার হুগলিতে এই পরিষেবা পেলেন না অনেক প্রসূতিই। কারণ, বকেয়া টাকার দাবিতে এ দিন থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন নিশ্চয়যান মালিকরা। আজ, সোমবার জেলার সিএমওএইচ দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

প্রসূতিদের হাসপাতালমুখী করতে ২০১০ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে নিশ্চয়যান চালু হয়। হুগলিতে এই পরিষেবা শুরু ২০১১ সাল থেকে। জন্মের এক বছর পর্যন্ত শিশু অসুস্থ হলে এই প্রকল্পে নিখরচায় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা। প্রতিটি হাসপাতালেই নিশ্চয়যান রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলোয় ভাড়ায় চলে। খরচ বাবদ হিসেব প্রতি মাসে জমা দিতে হয় স্বাস্থ্য দফতরে। সেই অনুযায়ী দফতরের তরফে টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ির মালিকদের সঙ্গে সরকারের নির্দিষ্ট চুক্তি রয়েছে। ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের জন্য ১৫০, ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫০ এভাবেই বাড়তে থাকে টাকার অঙ্ক। কিন্তু নিশ্চয়যান মালিকদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত সেই টাকা মিলছে না। নিজেদের পকেট থেকে পেট্রোল কেনা থেকে চালকের খরচ — সব মেটাতে হচ্ছে।

Advertisement

আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে পাঁচটি নিশ্চয়যানের মধ্যে বর্তমানে তিনটি চলে। চিত্তরঞ্জন ঘোষ নামে এক নিশ্চয়যান মালিকের অভিযোগ, ‘‘সাত-আট মাস ধরে টাকা মিলছে না। এক এক জনের দেড় থেকে ৩ লক্ষ টাকা বকেয়া। সুদে টাকা নিয়ে গাড়ির তেল কিনতে হচ্ছে। এ ভাবে কত দিন চালানো যায়!’’ ‘নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটার্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি অজিত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পেট্রোল পাম্পে বহু টাকা বাকি। চালকদের বেতন দিতে পারছি না। সরকারের বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। নিরুপায় হয়েই পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছি।’’ সংগঠনের সম্পাদক অনিরুদ্ধ সাধু বলেন, ‘‘সোমবার সব নিশ্চয়যান চুঁচুড়ায় সিএমওএইচ-এর দফতরের সামনে রেখে দেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, গোটা জেলায় শ’দুয়েক গাড়ি চলে। বকেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

আর এমন পরিস্থিতির জেরে বিপাকে প্রসূতিরা। পান্ডুয়ার জায়ের গ্রামের প্রসূতি সুলেখা বিবি ভর্তি ছিলেন পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। শারীরিক জটিলতার কারণে রবিবার তাঁকে চুঁচুড়া গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্বামী শেখ সলমন বলেন, ‘‘বিনে পয়সার গাড়ি যাবে না বলে দিল। ৭০০ টাকা দিয়ে অন্য গাড়ি ভাড়া করতে হল। আমরা গরিব। এত টাকা কি আমাদের পক্ষে জোগানো সম্ভব?’’ দাদপুরের শ্রাবণী ওঁরাওয়ের ছেলে হয়েছে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। রবিবার ছাড়া পেলেন। নিশ্চয়যান না মেলায় হাজার টাকায় অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে ফিরতে হল।

জেলার একটি গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ বলেন, ‘‘ এখানে ৫টি নিশ্চয় যান চলে। মোট ২০ লক্ষ টাকা বাকি। টাকা না এলে কোথা থেকে দেব! উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ সিএমওএইচ শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর ক্ষোভ, ‘‘জেলায় ৬০-৬৫টি নিশ্চয়যান চলে। ৪২-৪২ ‌লক্ষ টাকা বকেয়া। তা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেক প্রকল্পের টাকাই দেরি করে আসে। তা বলে কাজ বন্ধ করে এ ভাবে মানুষকে বিপাকে ফেলার কোনও মানে হয় না। টাকা এলে নিশ্চয়ই বিল মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন