ব্যবস্থা হয়নি নতুন চিকিৎসকের, শাবলসিংহপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

অন্তর্বিভাগ বন্ধ থাকায় হয়রান হচ্ছেন রোগীরা

চার বছর আগে অবধি অব্দি বন্যাপ্রবণ খানাকুলের ১২টি প্রত্যন্ত গ্রামের ভরসা ছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। রাতবিরেতে ডায়রিয়া, সাপে কাটা, প্রসূতির গর্ভ যন্ত্রণা ইত্যাদি চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া নিয়ে এলাকার মানুষের গর্বও ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খানাকুল শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩১
Share:

চার বছর আগে অবধি অব্দি বন্যাপ্রবণ খানাকুলের ১২টি প্রত্যন্ত গ্রামের ভরসা ছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। রাতবিরেতে ডায়রিয়া, সাপে কাটা, প্রসূতির গর্ভ যন্ত্রণা ইত্যাদি চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া নিয়ে এলাকার মানুষের গর্বও ছিল। এখন সে সব পরিষেবা মেলে না সেখানে। কারণ খানাকুল ২ নম্বর ব্লকের শাবলসিংহপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অন্তর্বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। দুই চিকিৎসকের একজন পড়তে চলে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় কেউ আসেননি। আর একজন অবসরের মুখে। তিনি কোনওমতে বহির্বিভাগটি সামলাচ্ছেন।

Advertisement

হুগলির আরামবাগ মহকুমার এই ব্লকটি ঘিরে রেখেছে নদী-খাল-বিল। প্রতি বছর বন্যার জেরে অধিকাংশ রাস্তাও ভাঙাচোরা। এই পরিস্থিতির মধ্যে শাবলসিংহপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ পরিষেবা বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রসূতি-সহ অন্যান্য রোগীদের ছুটতে হচ্ছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। যা এই এলাকা থেক প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে। তুলনায় খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতাল কম দূরত্বে (১০ কিমি) হলেও রোগীর লোকজনদের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর চাপের কথা শুনিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মহকুমা হাসপাতালে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকে অতীতে পরিষেবা পেতেন শশাপোতা, মমকপুর, নন্দনপুর, হরিশচক, বনহিজলি, রাউতখানা, শাবলসিংহপুর প্রভৃতি গ্রামের মানুষ। শাবলসিংপুরের শেখ রফিকুল, শশাপোতা গ্রামের নয়ন মালিক, হরিশচকের কার্তিক রায় বলেন, ‘‘উপযুক্ত ঘর এবং শয্যা থাকা সত্ত্বেও স্রেফ চিকিৎসক না থাকায় আমাদের বছর চারেক ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্তর্বিভাগ চালু করার জন্য বহুবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।’’

Advertisement

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকরিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “শাবলসিংহপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুজন চিকিৎসকের একজন নেই। অন্য জন অবসর নেওয়ার মুখে। সমস্যার কথা রাজ্যস্তরে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক পেলেই অন্তর্বিভাগ চালু হয়ে যাবে।’’

১৯৪৬ সালে গ্রামের মানুষের দান করা জমিতে তৈরি হয় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামনারায়ণ গোস্বামী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৯২ সালে কাজ শেয হয়। তখনই অন্তর্বিভাগ চালু করার জন্য স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগের অনুমোদন মেলে। ১৯৯৭ সালে ১০টি শয্যা মিললেও চিকিৎসক, অন্যান্য কর্মী-সহ পরিকাঠামোর অভাবে তা চালু করা যায়নি। উপযুক্ত পরিকাঠোমো নিয়ে ২০০৩ সালের ২৩ মে অন্তর্বিভাগটি উদ্বোধন হয়। ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তা ভালই চলছিল। ওই সময়েই দু’জন চিকিৎসকের একজনকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে তুলে নিয়ে যাওয়ায় প্রথম দফায় অন্তর্বিভাগটি বন্ধ হয়। স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভের জেরে মাস চারেকের মধ্যে ফের ওই চিকিৎসককে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু তার ৬ মাস পরেই দুই চিকিৎসকের একজন উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যাওয়ায় পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া অন্তর্বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement