সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বতীকালীন নির্দেশমতো জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া দেশের কোনও প্রকল্পেই আধার কার্ড আর বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু হুগলি জেলায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ এখনও মানা হচ্ছে না এবং তার ফলে তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকেরা। এ নিয়ে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখা দিয়েছে।
প্রশাসনের হিসেবে, হুগলিতে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে নাম রয়েছে অথচ, আধার কার্ড নেই— এমন শ্রমিকের সংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজার ৪৫৮ জন। অভিযোগ, তাঁরাই ওই প্রকল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা মেনে নিয়ে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্য বা জেলা প্রশাসনের থেকে কোনও নির্দেশ না মেলাতেই ওই রায় বাস্তবায়িত করা যায়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আধার কার্ড না থাকায় শ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন না, এই অভিযোগ পেয়েছি। ব্লকগুলিকে সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। প্রতিদিন ব্লক ধরে পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে মিটিং করে বিষয়টা বলাও হচ্ছে।’’
বন্যার পর হুগলি জেলার সব ক’টি ব্লক এলাকায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প জোরকদমে শুরু হয়েছে। গত ১ অগস্ট থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৪ লক্ষ ১০ হাজার ৪৫৯টি শ্রমদিবসের কাজ হয়েছে। অথচ, কাজের এই মরসুমে স্রেফ আধার কার্ড নেই বলে নিজের সংসদ এলাকায় কাজ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বহু শ্রমিক। অথচ, আধার নম্বর না থাকলেও শ্রমিকে কাজের সুয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল আগে থেকেই। কিন্তু সেই ব্যবস্থাপনায় সমস্যা আছে বলে ব্লক প্রশাসনগুলির দাবি। যেমন, পঞ্চায়েতের সংসদ এলাকায় কত জন আধার কার্ডহীন শ্রমিক কাজ করতে চান তাঁদের তালিকা সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো এবং তা অনুমোদন হয়ে আসার সময়ের মধ্যে সেই কাজটি রূপায়ণ হয়ে যায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে আধার নম্বর যুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয় ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর। নির্দেশ ছিল, ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকার সক্রিয় শ্রমিকের আধার নম্বর সংগ্রহ করে এনআরইজিএ প্রকল্পের ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করতে হবে। যদিও প্রতিটি ব্লকে আধার কার্ড করার স্থায়ী কেন্দ্র করেও সমস্ত শ্রমিকদের আধার কার্ড এখনও হয়নি।
হুগলিতে ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের মোট সক্রিয় শ্রমিকের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৩৯ জন শ্রমিকের আধার নম্বর এনআরইজিএ-র ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত হয়েছে। বাকি রয়ে গিয়েছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার ৪৫৮ জন। ওই শ্রমিকেরা কাজ না পাওয়ায় বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার সুপারভাইজারদের সঙ্গে প্রায় অশান্তি হচ্ছে।
ইতিমধ্যে কাজ না পাওয়ায় সুপারভাইজারদের সঙ্গে মারপিটেরও ঘটনা ঘটেছে খানাকুল, আরামাবাগ, তারকেশ্বর, ধনেখালি, গোঘাট-সহ বেশ কয়েকটি ব্লক এলাকায়। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে শ্রমিক হিসাবে নথিভুক্ত (জবকার্ড হোল্ডার) অথচ আধার কার্ড নেই— এমন শ্রমিকদের মধ্যে খানাকুল-১ ব্লকের অরুন্ডা গ্রামের গৌতম দলুই বলেন, ‘‘বন্যায় ধান ও সব্জি নষ্ট হয়ে গিয়ে এমনিতেই সর্বস্বান্ত হয়েছি। এখন এলাকায় ১০০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে। আধার কার্ড নেই বলে সেখানে কাজ পাচ্ছি না। সংসার চলছে না। অথচ, শুনছি আধার কার্ড আর বাধ্যতামূলক নয়।’’
কাজ না পাওয়ায় একই ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খানাকুল-২ ব্লকের চিংড়া গ্রামের কানন হাজরা, গোঘাট-১ নম্বর ব্লকের বালি পঞ্চায়েতের রণজিৎ নন্দী, গুড়াপের নিমাই বাগের মতো অনেকেই।