উত্তর হাওড়ায় এক মাস জলবন্দি বাসিন্দারা

কারণ আগের বছরে যেখানে বড় পাম্প লাগিয়ে এক ঘণ্টা জমা জল বার করা হয়েছে, এ বার বড় পাম্প সরিয়ে ছোট ছোট কয়েকটি পাম্প বসানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫০
Share:

জলমগ্ন: বৃষ্টিতে এমনই অবস্থা। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

প্রায় খাটের উপরে তক্তপোষ তোলার মতো অবস্থা!

Advertisement

এ কোনও খ্যান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির গল্প নয়। এমন অবস্থা এখন উত্তর হাওড়ার জিটি রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। সেখানে পুরসভার দু’টি ওয়ার্ডে জমা জল ঢুকে তছনছ করে দিয়েছে গেরস্থের হেঁশেল থেকে শোয়ার ঘর। ঘরের ভিতরে জল জমে রয়েছে কোথাও এক হাঁটু, তো কোথাও তারও বেশি। রবিবারের টানা বৃষ্টির পরে সেই জল বেড়ে গিয়ে নর্দমা, রাস্তা, পুকুর এক হয়ে গিয়েছে। টানা প্রায় এক মাস ধরে খোদ শহরের বুকে এমনই জলবন্দি অবস্থায় কাটানোর পরে শেষে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে সোমবার দুপুরে এলাকার বাসিন্দারা জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ছোটেলাল মিশ্র রোড এবং জিটি রোড এলাকা থেকে জল পাম্প করে বার করার জন্য কয়েক বছর যে ঠিকাদার কাজ করছিলেন, এ বছর তাঁকে সরিয়ে পুরকর্তাদের একাংশের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়ায় এই সমস্যা বেড়েছে। কারণ আগের বছরে যেখানে বড় পাম্প লাগিয়ে এক ঘণ্টা জমা জল বার করা হয়েছে, এ বার বড় পাম্প সরিয়ে ছোট ছোট কয়েকটি পাম্প বসানো হয়েছে। তাই এক মাসেও জল নামেনি।

হাওড়ার ‘লাইফ লাইন’ জিটি রোডের যে অংশটি উত্তর হাওড়ার জায়সবাল ও সত্যবালা হাসপাতালকে দু’পাশে রেখে বালিমুখী হয়েছে, সেই অংশটির বিস্তৃত এলাকায় বর্ষায় জল জমা নতুন কিছু নয়। গত ৩০ বছর ধরে একই সমস্যায় ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা। গত কয়েক বছর ধরে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে ওই অংশের জিটি রোডকে উঁচু করে কংক্রিট ঢালাই করে দেওয়ায়। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাওড়া পুরসভার ৩ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড। রাস্তা উঁচু হয়ে যাওযায় আশপাশের অলিগলির বাড়িগুলি নিচু হয়ে গিয়েছে। ফলে জল এক বার জমে গেলে তা আর বেরোনোর জায়গা পাচ্ছে না।

Advertisement

আর সেই ফল ভুগতে হচ্ছে স্থানীয় ছোটেলাল মিশ্র রোডের বাসিন্দাদের। ওই এলাকার বাসিন্দা দীপক সরকার বলেন, ‘‘জিটি রোড উঁচু করার জন্য তার সঙ্গে সমতা রাখতে গিয়ে ভিতরের রাস্তাগুলি উঁচু করতে হয়। ফলে তার আশপাশের বাড়িরগুলির অবস্থা বাটির মতো হয়ে গিয়েছে। দিনের পর দিন জল জমে থাকছে।’’

গত এক মাস ধরে কী যে অবস্থার মধ্যে মানুষগুলো দিন কাটাচ্ছেন, তা এ দিন ওই এলাকায় গিয়েই বোঝা যায়। রান্নাঘর থেকে শোয়ার ঘর— অধিকাংশ বাড়িতেই জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। দিনের পর দিন এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকায় জল পচে গন্ধ ছাড়ছে। এলাকার বাসিন্দা বীণা খান বলেন, ‘‘দিনের পর দিন জল জমে দুর্গন্ধ ছাড়ছে। আমাদের রান্নাবান্না মাথায় উঠেছে। মানুষের চর্মরোগ হয়ে যাচ্ছে।’’

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর জল জমলেও বড় পাম্প চালিয়ে জল বার করার বরাত পেয়েছিলেন পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ঠিকাদার। কিন্তু এ বার অন্য এক ঠিকাদার যিনি প্রায় সারাদিন পুরভবনে ঘুরে বেড়ান, তিনিই টেন্ডার পান। এলাকার বাসিন্দা সন্দীপ জায়সবাল বলেন, ‘‘পুরকর্তাদের ঘনিষ্ঠ ওই ঠিকাদার খরচ কমের ওজুহাত দেখিয়ে ছোট ছোট পাম্প চালানোয় এই সমস্যা হচ্ছে। জল বেরোচ্ছে না।’’

স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি মান্না বলেন, ‘‘কে পাম্প বসানোর টেন্ডার পাবেন, তা দেখা আমার কাজ নয়। এলাকায় জল যাতে না জমে, তার জন্য নিকাশি উন্নতির কাজ শুরু করেছি। বাড়িগুলির পাশের রাস্তাঘাট উঁচু হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। নতুন পাম্প বসিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন