চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোতেও কার্নিভাল! তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনে এ বার কার্নিভাল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখর হয়েছেন বহু শহরবাসী। শহর জুড়ে উৎসবের তুঙ্গ প্রস্তুতির মধ্যেও চলছে ওই সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে জল্পনা।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৬
Share:

ঐতিহ্য: চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রা।নিজস্ব চিত্র

কেউ মনে করছেন, ‘সরকার নাক গলাচ্ছে’।

Advertisement

কারও আশঙ্কা, ‘ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হবে’।

কারও আবার সন্দেহ, ‘রাজনীতির অনুপ্রবেশ’।

Advertisement

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনে এ বার কার্নিভাল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখর হয়েছেন বহু শহরবাসী। শহর জুড়ে উৎসবের তুঙ্গ প্রস্তুতির মধ্যেও চলছে ওই সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে জল্পনা। রবিবার বিকেলে জনাপঞ্চাশ ‘ফেসবুক বন্ধু’ স্ট্র্যান্ডে প্রতিবাদ-মিছিলও করেন।

কার্নিভালে ঠিক কী হতে চলেছে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন পুজো উদ্যোক্তা, কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি, এমনকী, পুলিশ প্রশাসনের কর্তারাও।

চন্দননগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রাকে কার্নিভালের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রতিবারের মতো একই পদ্ধতিতে প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। তবে আগে মানুষ দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন। এখন স্ট্র্যান্ডে ছাউনি দেওয়া বসার ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপত্তা বাড়ানো হবে, জৈব শৌচাগার, ওয়াচ টাওয়ার এবং নিরঞ্জনের জন্য ঘাটেরও সু-বন্দোবস্ত করা হবে। শোভাযাত্রার সামিল পুজো উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃতও করা হবে।

কলকাতার সেরা দুর্গাপুজোগুলিকে নিয়ে তিন বছর ধরে রেড রোডে কার্নিভালের আয়োজন করছে রাজ্য সরকার। যাতে একই জায়গা থেকে একসঙ্গে শহরের সেরা প্রতিমাগুলিকে দেখে নিতে পারেন সকলে। এ জন্য আলোয় মুড়ে ফেলা হয় রেড রোড। ভিআইপি, অতিথি-অভ্যাগতদের জন্য বিশেষ বসার ব্যবস্থা করা হয়। বহু দর্শক যাতে কার্নিভাল দেখতে পারেন, থাকে সেই ব্যবস্থাও। পুজো কমিটিগুলি শোভাযাত্রায় নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষোভপ্রকাশ।

চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। এক সময়ে গ্যাসের আলোয় শোভাযাত্রা হত। তার পর এল টুনি বাল্‌বের আলো। সেই আলোয় নানা কারিকুরি দেখে অবাক হতেন দর্শক। সেই আলোর খ্যাতি পৌঁছল দেশের নানা প্রান্তে, বিদেশেও। তারপর এল এলইডি আলো। একাধিক ট্রাকে সেই আলোকময় শোভাযাত্রা দেখতে হাজির হন দূরদূরান্তের মানুষ। কয়েক বছর ধরে রাতভর সেই শোভাযাত্রায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করছে কিছু পুজো কমিটি।

দশমীর সন্ধেবেলা স্ট্র্যান্ডে, থানার সামনে থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার হয়ে জিটি রোড ধরে প্রথমে তালডাঙা। তারপরে পালপাড়া, বাগবাজার হয়ে ফের জিটি রোড ধরে জ্যোতির মোড় হয়ে হাটখোলা দিয়ে থানার সামনে এসে (মোট সাড়ে আট কিলোমিটার) শেষ হয় শোভাযাত্রা। গোটা পথে কাতারে কাতারে মানুষ থাকেন। রাস্তার দু’পাশের বাড়ি-দোকানের ছাদ, বারান্দা ভরে ওঠে।

এই পরম্পরাই এ বার কার্নিভালের রূপ পাচ্ছে। চন্দননগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন শনিবার শহরের রবীন্দ্রভবনে এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে, কার্নিভালের চূড়ান্ত রূপ কী হবে, তা এখনও নির্দিষ্ট হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘কী পদ্ধতিতে কার্নিভাল হবে তা পরবর্তী বৈঠকে পুজো উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ প্রায় একই বক্তব্য পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডুরও। কার্নিভালের নির্দেশের কথা তাঁরা কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির কার্যকারী সভাপতি নিমাইচন্দ্র দাস।

কিন্তু শহরের বাসিন্দাদের একাংশ এই সরকারি সিদ্ধান্তে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতদিন যে উৎসব হতো, তাতে ছেদ পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে অনেকের। শহরের বারাসত এলাকার বাসিন্দা, প্রাক্তন অধ্যাপক তরুণ রায় বলেন, ‘‘নতুন সিদ্ধান্ত খুব ভাল লাগছে না। ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হতে পারে। বিধি-নিষেধ নিশ্চয়ই চাপবে।’’ গোন্দলপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা সেবাব্রত মণ্ডলের প্রশ্ন, ‘‘কার্নিভালের সময় অবাধে চলাচল করা যাবে কি? এতদিন তো কেউ আটকায়নি।’’

ইন্দ্রনীল যাবতীয় সংশয় এবং আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, কিছু মানুষ রাজনৈতিক মুনাফা লুটতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। চন্দননগরের পুরনো ঐতিহ্যকে ১০০ শতাংশ অক্ষুণ্ণ রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন