ফুসফুসে বাঁশি, অস্ত্রোপচারে বিপন্মুক্ত বালক

মাকে গিয়ে জানায় বাঁশি বাজানোর সময় তার গলায় কিছু ঢুকে গিয়েছে। বুকে ব্যথাও হচ্ছে। বার কয়েক বমি করার চেষ্টা করলেও অস্বস্তি বাড়তে থাকে।মা অনিশা বেগম দেরি করেননি। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যান ছেলেকে নিয়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, দ্রুত কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২৭
Share:

শেখ শাহিল

বাঁশিওয়ালার আওয়াজে সাড়া না দিয়ে সে পারে না! কিন্তু সেই বাঁশিতেই ঘটল বিপদ! তবে, চিকিৎসকদের রাতভরের ল়ড়াইয়ে বিপন্মুক্ত হয়ে ফুটবল আর বাঁশির কাছে ফিরে গেল বছর বারোর দুরন্ত ছেলে।

Advertisement

শুক্রবার বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলার সময় বাঁশির আওয়াজ পেয়েই গোলপোস্ট ছে়ড়ে দৌড়ে গিয়েছিল শেখ শাহিল। প্লাস্টিকের বাঁশি কিনে সুর করে বাজিয়ে ফের মাঠের দিকে রওনাও দিয়েছিল ডোমজুড়ের জগৎবল্লভপুরের ছেলেটা। কিন্তু মাঠেই ঘটে বিপত্তি! হঠাৎ তার মনে হয় বুকে কিছু আটকে গিয়েছে। দৌ়ড়ে বাড়িতে যায় সে।

মাকে গিয়ে জানায় বাঁশি বাজানোর সময় তার গলায় কিছু ঢুকে গিয়েছে। বুকে ব্যথাও হচ্ছে। বার কয়েক বমি করার চেষ্টা করলেও অস্বস্তি বাড়তে থাকে।

Advertisement

মা অনিশা বেগম দেরি করেননি। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যান ছেলেকে নিয়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, দ্রুত কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হবে।

গাড়ি জুটিয়ে ছেলেকে নিয়ে অনিশা বেগম কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন রাত তিনটে নাগাদ। চিকিৎসকেরা এক্স-রে, সিটি স্ক্যান করে জানান, শাহিলের বাঁ দিকের ফুসফুসের কাছে কিছু আটকে রয়েছে। বুকে ব্যথার পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। দ্রুত অবস্থা খারাপ হতে থাকে ছেলেটির।

তবে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে শনিবার ভোরে শাহিলের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পরেই চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার শুরু করেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইএনটি বিভাগের প্রধান রামানুজ সিংহের তত্ত্বাবধানে ইএনটি চিকিৎসক সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায় অস্ত্রোপচার করেন। শ্বাসনালী থেকে ব্রঙ্কোস্কোপি করে প্লাস্টিকের বাঁশির অংশ বার করা হয়। দীপ্তাংশুবাবু বলেন, ‘‘শাহিলের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তবে, অপটিক্যাল ফরসেপের সাহায্যে শ্বাসনালী থেকে বাঁশির অংশ বার করা গিয়েছে। এখন ছেলেটি ভাল আছে।’’

বাঁশির এই টুকরোই আটকে ছিল শাহিলের গলায়। নিজস্ব চিত্র

ছেলে ফের স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছে দেখে স্বস্তি পেয়েছেন অনিশা বেগম। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেকে নিয়েই আমার সংসার। ওর বাবা বারো বছর আগে মারা গিয়েছে। ছেলে যখন বলছিল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’

এই ধরণের অস্ত্রোপচারের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বারবার ছুটে যেতে হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। শহরের একাধিক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও রেফার করে দেয় সেই এসএসকেএমে। চিকিৎসকদের মতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ যে ভাবে দায়িত্ব নিল, বাকিরা সেই পথ অনুসরণ করলে এই ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।

দিন কয়েক আগে যেমন হুগলির দেড় বছরের এক শিশু গলায় বাদাম আটকে জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার হওয়ার পরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকেও তাকে রেফার হয়। শেষে অস্ত্রোপচার হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। প্রশ্ন উঠেছে, সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন এই দায়িত্ব নেবে না।

সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ব্রঙ্কোস্কোপি করার পরিকাঠামো অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসকও রয়েছেন। কিন্তু ঝুঁকি এড়ানোর মানসিকতা থেকেই রোগী রেফার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন