এত নথি কী ভাবে! ধন্দে পুলিশও

দি‌ল্লি পৌঁছে বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে এবং একটি এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁরা থ হয়ে যান। সামনে আসে নাইজেরীয়দের কীর্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

বাজেয়াপ্ত: নগদ টাকা, ল্যাপটপ, মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নথি মিলেছে ধৃতদের কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

ফোন এবং এটিএম কাউন্টারের সূত্র ধরে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তরপাড়া থানার তিন পুলিশকর্মী। তখনও তাঁরা জানতেন না, প্রতারণার নেপথ্যে কে বা কারা!

Advertisement

দি‌ল্লি পৌঁছে বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে এবং একটি এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁরা থ হয়ে যান। সামনে আসে নাইজেরীয়দের কীর্তি। তিন নাইজেরীয়কে গ্রেফতারের পরে চন্দননগর কমিশনারেটের কর্তারা মনে করছেন, চক্রের জাল আরও বিস্তৃত।

কমিশমনারেটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই সাব-ইনস্পেক্টর এবং এক কনস্টেবল ১৫ দিন ধরে দি‌ল্লি, নয়ডা, গুরুগ্রামে ঘুরে সেখানকার স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে তদন্ত চালিয়েছেন। ব্যাঙ্কের সাহায্য নিয়েছেন। এমনকি গ্রেটার নয়ডার কাসনা থানা এলাকার গৌতম বুদ্ধ নগরের একটি এটিএমের সামনে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেছেন।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত গত রবিবার জন মানসা নামে এক নাইজেরীয় এটিএমে ঢুকতেই ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তাকে ধরে ফেলেন তদন্তকারীরা। পরে জন মাইকেল এবং ইবো ফ্রাইডে নামে আরও দু’জনকে ধরা হয়। ট্রেনে চাপিয়ে মঙ্গলবার ধৃতদের উত্তরপাড়ায় আনা হয়।

বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে কমিশনারেটের এসিপি মল্লিকা গর্গ জানান, ধৃতদের জিম্মা থেকে তিনটি ল্যাপটপ, ২০টি মোবাইল ফোন, দু’টি ট্যাব, একটি আইপ্যাড, ২১টি এটিএম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ৩০টি পাসবই এবং চেকবই বাজেয়াপ্ত করা হয়। উদ্ধার হয়েছে নগদ ৩ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা এবং ৫০০ মার্কিন ডলার।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ধৃতেরা বেশ কয়েক বছর ধরে এ দেশে রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ে তারা সড়গড়।

এ দেশের যাবতীয় নাগরিক পরিচয়পত্র রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও। কিন্তু কী করে তারা সেগুলি পেল, সেই প্রশ্ন উঠছে। কোনও ভারতীয়ের সঙ্গে তাদের যোগসাজস রয়েছে কি না, প্রশ্ন তা নিয়েও। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মল্লিকা বলেন, ‘‘তদন্তে অনেক কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব প্রশ্নের উত্তর এখনও আমাদের কাছে নেই।’’ তদন্তকারীরা জানান, ধৃতদের থেকে পাওয়া নথিপত্র আসল কি না, তা দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তরপাড়ার এক তরুণীর সঙ্গে কয়েক মাস আগে ইন্টারনেটে বিয়ের বিজ্ঞাপনের সাইটে আদর্শ খুরানা নামে এক যুবকের পরিচয় হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিয়ের কথাবার্তা যায়। যুবকটি জানান, তিনি দিল্লির বাসিন্দা। কর্মসূত্রে নিউইয়র্কে থাকেন। তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, ১৩ মার্চ তরুণীকে যুবকটি জানান, দেশে ফিরছেন। সঙ্গে অনেক গয়নাগাটি থাকায় দিল্লি বিমানবন্দরে কাস্টমস সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছেন। এর পরেই তাঁর দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা পাঠায় তরুণীর পরিবার। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ১৬ মার্চ উত্তরপাড়া থানায় এফআইআর করে তরুণীর পরিবার। পুলিশের ধারণা, প্রবাসী ভারতীয়ের নাম করে জাল পাতে প্রতারক চক্র। সেখানে আদর্শ খুরানা বলে কারও উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি।

বুধবার তরুণীর পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারে অতগুলো টাকা বিরাট ব্যাপার। আগে টাকা ফেরত পাই। এর বেশি এখন কিছু

বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন