—প্রতীকী চিত্র।
নাগরিকের হাতে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা যেন থামছেই না। গত মাসে আমহার্স্ট স্ট্রিটে সিগন্যাল ভাঙার অপরাধে একটি ট্যাক্সিকে আটকানোয় জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের এক কনস্টেবলকে হেনস্থা করেছিলেন চালক। শনিবার রাতে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে সিগন্যাল ভেঙে চলে গিয়েছিল একটি ট্যাক্সি। কিছু দূর যাওয়ার পরে সেটিকে আটকান কর্তব্যরত ট্র্যাফিক কনস্টেবল। অভিযোগ, চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা মারধর করেন ওই কনস্টেবলকে।
এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হাওড়ার মৌখালি। শনিবার রাতে চলন্ত বাসে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল চার যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, হাতজোড় করে সাহায্য চাইলেও তাঁকে বাঁচাতে আসা তো দূর, অন্য যাত্রীরা ঘটনার প্রতিবাদটুকু করেননি। মারের চোটে হাতের চেটো ফেটে যায় ওই পুলিশকর্মীর। গুরুতর আঘাত লাগে মুখ ও চোখে। গ্রেফতার হয়েছে দুই অভিযুক্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত ৮টা নাগাদ সাঁতরাগাছি ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসে যাওয়ার জন্য নিউ টাউন-ধূলাগড় রুটের বাসে উঠেছিলেন ওই ট্র্যাফিক গার্ডেরই কর্মী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। অভিযোগ, বাসে ওঠার পরেই সামনের সিটে বসা চার যুবক তাঁকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করে। কেন তাঁরা গালিগালাজ করছেন, রবীন্দ্রনাথবাবু জানতে চাইলে তাঁকে গিয়ে মারতে শুরু করে ওই যুবকেরা। জনা তিরিশ সহযাত্রীর সামনেই রবীন্দ্রনাথবাবুকে বাসের মেঝেয় ফেলে কিল-ঘুষি-লাথি মারা হয়। আরও অভিযোগ, এক জন ব্যাগ থেকে লোহার ডান্ডা মতো বার করে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘যে হাত দিয়ে ঘুষ নিস সেই হাতটাই ভেঙে দেব’। ওই যুবকই রবীন্দ্রনাথবাবুর ডান হাতে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। বার বার আঘাত করায় হাতের চেটো ফেটে যায় তাঁর।
পুলিশ জানিয়েছে, অসহায় রবীন্দ্রনাথবাবু অন্য যাত্রীদের কাছে হাতজোড় করে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকী, বাসও থামাতে বলেননি। কিন্তু চলন্ত বাসে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনে হাওড়া সিটি পুলিশের সাঁতরাগাছি সাউথ পোস্টের কর্মীরা সেটি আটকান। তাঁরা এসে দেখেন, তাঁদেরই এক সহকর্মী রক্তাক্ত অবস্থায় সাহায্য চাইছেন। তখনই রবীন্দ্রনাথবাবুকে উদ্ধার করে তাঁরা দক্ষিণ হাওড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরই মধ্যে সুযোগ বুঝে আক্রমণকারীদের দু’জন পালিয়ে যায়। তবে বাকি দু’জনকে ধরে ফেলেন ট্র্যাফিক পোস্টের কর্মীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দু’জনের নাম আলাউদ্দিন শেখ ও নাসিবুল শেখ। আলাউদ্দিনের বাড়ি ডোমজুড়ে। নাসিবুল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার বাসিন্দা। বাকি দুই অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। রবিবার সকালে বাসটি আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার খবর জেনে শনিবার রাতেই রবীন্দ্রনাথবাবুকে হাসপাতালে দেখতে যান হাওড় সিটি পুলিশের পদস্থ র্কতারা। এসিপি (সাউথ) গুলাম সারওয়ার বলেন, ‘‘ওই পুলিশকর্মীর জ্ঞান ফিরেছে। তিনি কথা বলছেন। পলাতক দুই যুবককে খোঁজা হচ্ছে।’’