হাও়ড়া

আগে উদ্যোগী পুলিশ, ভুগতে হল না যানজটে

নিজেদের কর্মীরা তো ছিলেনই। সঙ্গে গোটা শহর জুড়ে সজাগ ছিল সিসি ক্যামেরার চোখ। আর তার জেরেই এ বারের পুজোয় চার দিনের ভিড়কে টেক্কা দিল হাওড়া সিটি পুলিশ। উত্তরে বালি, সালকিয়া থেকে দক্ষিণে ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, সব জায়গাতেই যানবাহন ও জনতার ভিড়ে জট পাকতে দেয়নি পুলিশ। ফলে শহরের ‘লাইফ লাইন’ জিটি রোড কার্যত যানজট মুক্তই থাকল পুজোয়।

Advertisement

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

পুজোর ভিড়। হাওড়ার একটি মণ্ডপে। — নিজস্ব চিত্র

নিজেদের কর্মীরা তো ছিলেনই। সঙ্গে গোটা শহর জুড়ে সজাগ ছিল সিসি ক্যামেরার চোখ। আর তার জেরেই এ বারের পুজোয় চার দিনের ভিড়কে টেক্কা দিল হাওড়া সিটি পুলিশ। উত্তরে বালি, সালকিয়া থেকে দক্ষিণে ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, সব জায়গাতেই যানবাহন ও জনতার ভিড়ে জট পাকতে দেয়নি পুলিশ। ফলে শহরের ‘লাইফ লাইন’ জিটি রোড কার্যত যানজট মুক্তই থাকল পুজোয়।

Advertisement

যানবাহন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেও সদা সজাগ ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কোথায় ভিড় বাড়ছে, গাড়ি আটকে যাচ্ছে দেখছিলেন পুলিশ কর্তারা। তেমনই আবার কোনও জায়গায় গোলমাল হচ্ছে কি না, কিংবা কেউ কোনও জায়গায় অপ্রীতিকর কিছু করার চেষ্টায় রয়েছে কি না তার উপরেও চার দিন ধরে নজর রেখেছিল পুলিশ। প্রয়োজন মতো শিবপুর পুলিশ লাইনের কন্ট্রোল রুম থেকে সংশ্লিষ্ট জায়গায় তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যাচ্ছিল নির্দেশ। সব মিলিয়ে এ বারের পুজোর পরীক্ষায় হাওড়া সিটি পুলিশকে একশোয় অন্তত আশি নম্বর দিচ্ছেন শহরবাসী এবং পুজোর উদ্যোক্তারা।

হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ মিলিয়ে অনুমোদিত পুজোর সংখ্যা ছিল ৬৯৫টি। এর মধ্যে বড় বাজেটের পুজোর সংখ্যাই ছিল প্রায় ১০০-র কাছাকাছি। প্রতি বছরের রেকর্ড অনুযায়ী এই সমস্ত পুজোগুলিতেই সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় উপচে পড়ে। মূলত সালকিয়া স্কুল রোড, জিটি রোড, পঞ্চাননতলা রোড, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড এবং কামারডাঙা রোডের উপরেই ছিল এই বড় পুজোর মণ্ডপগুলি। বিগত বছরগুলিতে দেখা গিয়েছে, যানবাহন ও দর্শনার্থীদের চাপে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল ওই রাস্তাগুলি।

Advertisement

হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমরা ওই সমস্ত রাস্তাগুলিতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর উপরে জোর দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল, প্রথমত অপরাধ ঠেকানো, দ্বিতীয়ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা। আর তাতে আমরা পুরোপুরি সফল।’’ তিনি আরও জানান, এ বারের পুজোয় হাওড় শহরে প্রায় ২২০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। শহর জুড়ে ছিল ৮৫০টির মতো সিসি ক্যামেরার নজরদারি। এ ছাড়াও ভিড় সামলাতে ট্রাফিক ওয়ার্ডেন এবং একটি বেসরকারি নিরপত্তা সংস্থার ১৫০ জন কর্মীকে রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তর হাওড়ার বালি থেকে সালকিয়া হয়ে মধ্য হাওড়ার বঙ্গবাসী মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত জিটি রোড সচল রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সালকিয়া স্কুল রোডকে দ্বিমুখী করে দেওয়ায় জিটি রোডের উপর তেমন কোনও চাপই পড়েনি। অন্য দিকে, যে রাস্তাটি বেশির ভাগ সময়েই ভিড়ের চাপে স্তব্ধ হয়ে যায় সেই ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের দু’পাশেই রেলিং দিয়ে দিয়ে দর্শনার্থী ও গাড়ির রাস্তা আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে পথচারীরা যেমন সহজেই এক মণ্ডপ থেকে আরেকটিতে পৌঁছোতে পেরেছেন, তেমনি যানবাহনের গতি বেশ কিছু জায়গায় কমে গেলেও একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়নি।

পুজোর আগেই পুলিশ ঘোষণা করেছিল, বিকেল ৪টের পরে প্রধান রাস্তায় কোনও টোটো চলবে না। শহরের উত্তর ও দক্ষিণ সেই নিয়ম মানলেও, বালি-বেলুড়-লিলুয়া-ঘুসুড়ি জুড়ে রাত পর্যন্ত টোটো চলেছে নিজের খেয়ালখুশি মতো। তবে পুজোর চার
দিন জিটি রোড সহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মোটরবাইকের দাপটকে রেয়াত করেনি পুলিশ। বিভিন্ন জায়গাতেই রীতিমতো চেকিং চলেছে। তিন জন সওয়ারী এবং বিনা হেলমেটের যাত্রী দেখলেই আটকানো হয়েছে মোটরবাইক। পাশাপাশি বড় বাজেটের পুজোর মণ্ডপ এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে ভিড়ের মধ্যেই মিশে ছিলেন সাদা পোশাকের পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়াররা।

পুলিশের এই আয়োজনে খুশি বড় পুজোর উদ্যোক্তারাও। যেমন, উত্তর হাওড়ার ছাত্র ব্যায়াম সমিতির সম্পাদক পুলক শিকদার, সালকিয়া আলাপনীর সায়ন্তন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ঘিঞ্জি সালকিয়া স্কুল রোডে যানবাহন ও দর্শনার্থীদের পুলিশ যে ভাবে সামলেছে তা এক কথায় অনবদ্য।’’ অন্য দিকে, মধ্য হাওড়ার হালদারপাড়া ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অরুণাভ কর বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আমাদের নাজেহাল অবস্থা হয়। এ বছর সেই আশঙ্কাকে একেবারে বদলে দিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, আজ বৃহস্পতিবার বিসর্জনে বালি থেকে বটানিক্যাল গার্ডেন পর্যন্ত ৯টি ঘাটে নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ঘাটে, রাস্তায় থাকবেন পদস্থ পুলিশ কর্তারা। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদেরও। সঙ্গে গঙ্গায় টহল দেবে পুলিশের লঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন