বৌমাকে বাঁচাতে গিয়ে মায়ের হাত থেকে গুলি ছুটে জখম ছেলে

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, রেণুকাদেবীর দুই সন্তান। এক জন কলকাতায় থাকেন। মনোজ থাকেন হাওড়ায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০২:১৩
Share:

অঘটন: হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ মনোজ। সোমবার, হাওড়ার গোলাবাড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।

‘বাস্তব’ নামের এক হিন্দি ছবিতে অপরাধী ছেলেকে মুক্তি দিতে শেষ পর্যন্ত গুলি করে মেরেছিলেন মা।

Advertisement

সোমবার সাতসকালে অনেকটা এই ধরনেরই একটি ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার নন্দলাল মুখার্জি লেনের এক বহুতল আবাসনে। ছেলের অত্যাচারের হাত থেকে পুলিশকর্মী বৌমাকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন এক মহিলা। মায়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ে নিজেরই স্বয়ংক্রিয় রিভলভার থেকে গুলি বেরিয়ে গুরুতর আহত হলেন সেই ছেলে। জখম ওই যুবকের নাম মনোজ শর্মা। যে রিভলভারের গুলিতে তিনি জখম হন, সেটি মনোজই মা রেণুকাদেবীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পরে পড়শিরা ছুটে এসে জখম ওই যুবককে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই রিভলভার নিয়ে কাড়াকাড়ির সময়েই গুলি বেরিয়ে মনোজের পেট এ ফোঁড়-ও ফোঁড় করে দেয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, এটি দুর্ঘটনা। তা সত্ত্বেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই যুবকের মাকে আটক করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, রেণুকাদেবীর দুই সন্তান। এক জন কলকাতায় থাকেন। মনোজ থাকেন হাওড়ায়। বছর চারেক আগে তাঁর বিয়ে হয় হাওড়া সিটি পুলিশের হোমগার্ড বেবি প্রসাদের সঙ্গে। বিয়ের পরে মনোজ হাওড়ার নন্দলাল মুখার্জি লেনের ফ্ল্যাটে চলে আসেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই যুবক স্থানীয় এক প্রোমোটারের ছেলের গাড়ি চালান। কিছু দিন ধরে মনোজ প্রায়ই রাতে বাড়ি ফিরছিলেন না। ফিরতেন ভোরে। মত্ত অবস্থায়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হত। অভিযোগ, মনোজ স্ত্রীকে মারধরও করতেন। পুলিশ জানায়, এ দিনও মনোজ মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। তা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ফের অশান্তি শুরু হয় তাঁর। শুধু তা-ই নয়, নিজের মৃতা শাশুড়ির উদ্দেশ্যেও গালিগালাজ করতে থাকেন। উত্তেজনার বশে হঠাৎ পকেট থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় রিভলভার বার করেন মনোজ। তখনই মনোজের মা রেণুকা শর্মা ছেলে ও বৌমার মাঝে এসে দাঁড়ান।

Advertisement

মাকে দেখেই নিজের হাত থেকে রিভলভারটা মায়ের হাতে তুলে দেন মনোজ এবং পকেট থেকে অন্য একটি রিভলভার বার করে নিজের স্ত্রীর দিকে তাক করে গুলি চালানোর হুমকি দিতে থাকেন। ছেলেকে আটকাতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় মায়ের। তখনই তাঁর হাতে ধরা রিভলভার থেকে গুলি ছুটে যায়। লাগে মনোজের পেটে। মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আওয়াজ পেয়েই প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে আসে পুলিশও।

কিন্তু এক জন গাড়িচালকের কাছে দু’-দু’টি স্বয়ংক্রিয় রিভলভার এল কী করে? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারাই। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এটা একটা দুর্ঘটনা। স্ত্রীকেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে না। ওই যুবক সুস্থ হলেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অস্ত্র আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন