এক দিকে অতি ফলন, তার পর অসময়ে বৃষ্টি। এই জোড়া ‘প্যাঁচেই’ জেরবার রাজ্যের আলু চাষিরা। মরার উপর খাঁড়ার ঘা, আলু কিনতে দেরিতে মাঠে নেমেছে সরকার।
আলু কেনার সরকারি রূপরেখা চূড়ান্ত করতে রাজ্য বিস্তর সময় নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ মাসের ৬ তারিখে বৈঠক ডেকেও পিছিয়ে দেন। ফলে, সরকার আলু কেনা শুরুর আগেই হিমঘরগুলির ৭০-৮০ শতাংশ ভরে গিয়েছে। তাই চাষিদের প্রশ্ন, সরকার এখন কার থেকে আলু কিনবে? রাখবেই বা কোথায়? দেরিতে ধান কেনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন সরকার অনেকটা আগে আলু কেন শুরু করল না, সেই প্রশ্নই তুলেছেন আলু চাষিরা।
কলকাতার নজরুল মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, কিলো ৪ টাকা ৬০ পয়সা দরে চাষিদের থেকে আলু কেনা হবে। আলু মজুত করতে হিমঘরগুলিকে ১০ শতাংশ জায়গা খালি রাখার কথাও সরকারি ভাবে জানানো হয়। যদিও কতটা আলু সরকার কিনবে, কী ভাবে কাজ হবে, সোমবার পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়। রাজ্য কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘সব ঠিকঠাক চললে মাঠে নামতে সরকারের আরও দিন চারেক সময় লাগবে।’’
কিন্তু তত দিন মাঠে আলু পড়ে থাকবে না। ফের ঘূর্ণাবর্তের জেরে বৃষ্টি হলে মাঠে রাখা আলু হয় জলদাগি হবে, নয় পচে যাবে। হিমঘরে রাখা আলুর বন্ড ছা়ড়া তখন কেনার কিছু থাকবে না। ফলে, ক্ষতির বহর বাড়বে। রাজ্যের প্রধান আলু উৎপাদক জেলা হুগলির আরামবাগ, পুড়শুড়া, তারকেশ্বর, সিঙ্গুর ধনেখালি কিংবা জাঙ্গিপাড়া — সর্বত্রই চাষিদের দাবি, তাঁরা এ বার দাম পাননি। ঘন ঘন বৃষ্টি ও হিমঘরে জায়গা না পাওয়ার আশঙ্কায় হুগলির বহু চাষি অভাবি বিক্রিতে বাধ্য হন। চাষিদের মতে, বাম আমলের শেষ দিকে সরকার কিছু কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে আলু কিনেছিল। তাতে গরিব চাষির লাভ হয়।
কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেছেন, ‘‘আমরা আপাতত মিড ডে মিল এবং অঙ্গনওয়াড়ির জন্য চাষিদের থেকে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ কিন্তু জেলাগুলিতে তোড়জোড় শুরু হয়নি। হুগলির আরামবাগে আজ, মঙ্গলবার থেকে আলু কেনা শুরু হওয়ার কথা। বর্ধমান জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘চাষিদের কথা ভেবে আলু কেনার পরিকল্পনা চলছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক কর্তা এ নিয়ে বলেন, “সরকারি নির্দেশ জেলায় আসেনি।’’ এ অবস্থায় ফাঁপরে চাষিরা। সুলতানপুরের আব্দুল মণ্ডল, চন্দ্রকোনার বান্দিপুরের অভয় কোলের বক্তব্য, “সরকার কত আলু কী ভাবে কিনবে তা পরিষ্কার নয়। বিঘায় ৫-৭ হাজার টাকা ক্ষতিেত বেচতে হচ্ছে।” প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আলু কেনার কথা দেরিতে ঘোষণা হয়েছে। কার লাভ হল বুঝছি না।’’
(সহ-প্রতিবেদন: কেদারনাথ ভট্টাচার্য, অভিজিৎ চক্রবর্তী)