জেলা পরিষদের ফোন থেকে এক ব্যক্তির বাড়ির নক্শা অনুমোদনের জন্য মোটা টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠল হুগলির সভাধিপতি মেহবুব রহমানের আপ্ত-সহায়ক (পিএ) তপন গুছাইতের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জেলা পরিষদের খসরা বাজেট-বৈঠকের শুরুতেই হুলস্থুল হয়। শাসক দলের সদস্যদের একাংশ দাবি তোলেন, সিপিএম সমর্থক তপনবাবুর বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাঁকে পদ থেকে সরাতে হবে। শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিষয়টি তখনকার মতো ধামাচাপা পড়ে।
সে দিন ওই হইচইয়ের সময়ে জেলা পরিষদে উপস্থিত ছিলেন সভাধিপতি মেহবুব রহমান। তবে আগাগোড়া নিরুত্তর ছিলেন বলে সদস্যেরা জানান। শাসক দলের সদস্যদের একাংশ ওই ঘটনায় মেহবুবের ইন্ধন আছে বলেও অভিযোগ তোলেন। ওই ফোনের কথা মেনে নিলেও তপনবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, “যাঁকে ফোন করার কথা বলা হচ্ছে, তাঁকে সভাধিপতির সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলাম। সভাধিপতির নির্দেশেই ফোন করি। এর মধ্যে টাকা চাওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। এমন অভিযোগ কেন করা হচ্ছে, জানি না।” এ নিয়ে সভাধিপতির দাবি, “যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। বিষয়টি নিয়ে দলের তরফে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে জানিয়েছি।” সে দিন ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুমন ঘোষও।
তবে, তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, যাঁর বাড়ির নকশা অনুমোদনের জন্য ওই টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ, তিনি সিঙ্গুরের বাসিন্দা। শুক্রবারের সভায় সিঙ্গুর থেকে নির্বাচিত এক সদস্যা অভিযোগ তোলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকায় চারতলা একটি বাড়ি তৈরির জন্য এক ব্যক্তি জেলা পরিষদে বিধিবদ্ধ ভাবে দু’লক্ষেরও বেশি টাকা জমা দেন। কিন্তু জেলা পরিষদের ফোন থেকে ওই ব্যক্তিকে তপনবাবু মোটা টাকা ছাড়া নকশা অনুমোদন হবে না বলে জানান।” পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করেন ওই সদস্যা। তিনি। তখনই জাঙ্গিপাড়া থেকে নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য আসফার হোসেন বলে ওঠেন, “তপনবাবুকে বারে বারে অন্যত্র বদলির কথা বলা হয়েছিল। দল শোনেনি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে।” এর পরে খানাকুলের বর্ষীয়ান সদস্য শৈলেন সিংহও তদন্তের দাবি জানান।
মুকুল-ঘনিষ্ঠ, পুরশুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমানের ভাই মেহবুবকে সভাধিপতি করার দিন থেকেই দলের একাংশ ক্ষুব্ধ। সভাধিপতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে কয়েক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন জেলা পরিষদের ৩২ জন তৃণমূল সদস্য। ফের নতুন করে সভাধিপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ ওঠায় দলীয় নেতৃত্ব ফের অস্বস্তিতে। জেলা পরিষদের একাধিক প্রবীণ তৃণমূল সদস্য বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি আবারও দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জানাব। ওঁর বিচার বিবেচনার উপর আমাদের আস্থা আছে। আশা করছি, উনি এ বার নিশ্চয়ই বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সুরাহার পথ দেখাবেন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানান, বিষয়টি নিয়ে দলীয় স্তরে আলোচনা হবে।