প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা

তালিকায় পাকা বাড়ির মালিকের নাম, বিভ্রান্তি

তালিকায় ঢুকে গিয়েছে সম্পন্নদের নাম। তাঁদের রীতিমতো পাকা বাড়ি আছে। কিন্তু তালিকায় নাম থাকায় তাঁরাও ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি পাকা বাড়ি পাওয়ার হকদার হয়ে গিয়েছেন। আর এটা নিয়েই গোল বেধেছে হাওড়া জেলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৪
Share:

তালিকায় ঢুকে গিয়েছে সম্পন্নদের নাম। তাঁদের রীতিমতো পাকা বাড়ি আছে। কিন্তু তালিকায় নাম থাকায় তাঁরাও ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি পাকা বাড়ি পাওয়ার হকদার হয়ে গিয়েছেন। আর এটা নিয়েই গোল বেধেছে হাওড়া জেলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, যাঁদের পাকাবাড়ি আছে আবার তালিকাতেও নাম আছে তাঁদের এই তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই নাম বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল অনীহা। ফলে প্রায় এক বছর আগে প্রকল্পটি চালু হলেও এখনও কেউই এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা পাননি।

রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র। তবে ইন্দিরা আবাস যোজনায় যেমন বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকার ২০১১ সালে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জাতিগত সমীক্ষা করে। সেই ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হয়। তালিকায় নাম আছে এমন পরিবারকে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেবে বলে ঘোষণা করে। ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সেই তালিকা পাঠিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরেই দেখা দেয় বিপত্তি। দেখা যায়, এমন সব মানুষের নাম আছে যাঁদের পাকা বাড়ি আছে। শুধু তাই নয়, ইন্দিরা আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি এবং আশ্রয় প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদের নামও তালিকায় ঢুকে গিয়েছে। এঁদের ক্ষেত্রে কী করা হবে, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। দফতর থেকে বলা হয়, ইন্দিরা আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি এবং আশ্রয় প্রকল্পে যাঁরা বাড়ি তৈরি করেছেন তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। একইসঙ্গে বাদ দিতে হবে যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাঁদেরও। ইন্দিরা আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি এবং আশ্রয় প্রকল্পে যাঁরা বাড়ি পেয়েছেন তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে পঞ্চায়েতের প্রধানেরা রাজি হলেও, নিজেদের টাকায় যাঁরা বাড়ি করে ফেলেছেন তাঁদের নাম বাদ দিতে রাজি হননি অনেক প্রধান।

তালিকায় এমন গরমিল হল কেন?

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, সমীক্ষা হয়েছিল ২০১১ সালে। তালিকা প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে। সমীক্ষা চলাকালীন যাঁদের বাড়ি ছিল না, পরে তাঁদের অনেকেই পাকা বাড়ি করে ফেলেছেন। সেই কারণেই বিপত্তি হয়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন নিয়মে প্রাপকদের আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ১০০ দিনের প্রকল্পের জব কার্ড এবং যেখানে তিনি বাড়ি করবেন সেই জমির প্রমাণপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অনেকেরই আধার কার্ড নেই। জবকার্ডও অনেকের নেই। নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এক বিডিও জানান, তাঁর এলাকায় বেশিরভাগ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই এখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলানোর জন্য সময় দিতে পারছেন না।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) শঙ্করপ্রসাদ পাল বলেন, ‘‘ইন্দিরা আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি প্রকল্পে যাঁরা বাড়ি পেয়েছেন তাঁদের নাম তালিকা থেকে প্রধানদের বাদ দিতে বলা হয়েছে। তালিকায় নাম আছে, অথচ বাড়ি করেছেন এমন ব্যক্তিদের বিস্তারিত বিবরণ প্রধানদের ব্লকে পাঠাতে বলা হয়েছে। ওইসব নাম বাদ যাবে। বাকি কাজগুলিও করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব প্রাপকদের হাতে বাড়ি তুলে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন