চুরির জেরে লাভের সংস্থা হঠাৎ লোকসানের মুখে

বাতিল ঘোষণা করে যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অবাধে। টেন্ডার বা ই-টেন্ডার না ডেকেই। কেনাও হয়েছে ওই ভাবে। যা পুরোপুরি আইন-বিরুদ্ধ। অডিট রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর লঞ্চের জন্য কেনা হয়েছে গড়ে চার কোটি টাকার তেল। অথচ, তার কোনও টেন্ডার হয়নি।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০০
Share:

—ফাইল চিত্র।

এ যেন সত্যিই পুকুর চুরি!

Advertisement

বাতিল ঘোষণা করে যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অবাধে। টেন্ডার বা ই-টেন্ডার না ডেকেই। কেনাও হয়েছে ওই ভাবে। যা পুরোপুরি আইন-বিরুদ্ধ। অডিট রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর লঞ্চের জন্য কেনা হয়েছে গড়ে চার কোটি টাকার তেল। অথচ, তার কোনও টেন্ডার হয়নি।

হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থার পরিচালন বোর্ডের বিরুদ্ধে এমনই সব ভূরি ভূরি আর্থিক দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগ উঠে এসেছে তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে যেখানে ওই সমবায়ের নিট লাভ হয়েছিল ৫৩ লক্ষ টাকা, পরের অর্থবর্ষের অডিট রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, লাভ হওয়া তো দূর, সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩১ লক্ষ টাকা। কর্মীদের অভিযোগ, এই ক্ষতির পিছনে রয়েছে পরিচালন বোর্ডের একাংশের বেলাগাম দুর্নীতি ও অনিয়ম।

Advertisement

হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংস্থার ১৮টি ঘাটে লঞ্চ চলে। নিজস্ব জেটি ছিল পাঁচটি। তার মধ্যে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গঙ্গার উপরে থাকা অধিকাংশ জেটির খোলনলচে কোটি কোটি টাকা খরচ করে পাল্টে ফেলা হয়। কর্মীদের অভিযোগ, এই পাঁচটি জেটির মধ্যে বাউড়িয়া ও বজবজ জেটির কোনও সন্ধান নেই। বাকিগুলি বাতিল (স্ক্র্যাপ) বলে কোথায় বিক্রি করা হয়েছে, তারও কোনও হিসেব নেই। কর্মীদের দাবি, ওই জেটিগুলির কী হাল হয়েছে, তা অবিলম্বে জানার জন্য সদ্য নিযুক্ত প্রশাসকের কাছে তাঁরা ‘ফিজিক্যাল অডিট’ করার আবেদন জানাবেন।

স্টাফ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যিনি বা যাঁদের দুর্নীতির জন্য সংস্থার এত টাকার ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা প্রয়োজন। আমরা চাই, যে পরিমাণ টাকা নয়ছয় করা হয়েছে, তা তাঁদের কাছ থেকেই উদ্ধার করে সংস্থাকে বাঁচানো হোক।’’

কয়েক মাস আগে ওই সমবায় সংস্থার কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়। তদন্ত কমিশনের দায়িত্বে থাকা সমবায় দফতরের তিন পদস্থ অফিসার দিন-রাত পরিশ্রম করে পরিচালন বোর্ডের একাংশের অনৈতিক কাজকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রমাণ জোগাড় করেন। তার পরেই বোর্ড ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাতে বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়। শুক্রবার রাজ্য সরকারে প্রশাসক দায়িত্ব নেন।

ওই সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মীদের তরফে তদন্তকারী অফিসারদের যে বিষয়গুলি জানানো হয়েছে, তা হল: ১) বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ-সহ অফিস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বালি-সিমেন্টও কেনা হয়েছে বাছাই করা দু’জন সদস্যের কাছ থেকে। অথচ, সমবায় আইনে কোনও সদস্যের থেকে কিছু কেনা যায় না। ২) সমবায় আইনে না থাকা সত্ত্বেও গত দু’বছর ধরে পরিচালন বোর্ডের সদস্যেরা পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাতা নিয়েছেন। ৩) পুরীতে হলিডে হোম করার ছ’মাস পরেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কোনও কারণ ছাড়াই। ৪) বিল ছাড়াই এক সদস্যের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে গত দু’বছরে।

অভিযোগ মানতে চাননি সংস্থার চেয়ারম্যান তথা সাঁকরাইল কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব শীঘ্রই ওখানে গিয়ে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন