ডিভিসি-র ছাড়া জলে নিম্ন দামোদর অববাহিকার বর্ধমান, হুগলি এবং হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ ফি-বছর বানভাসি হয়। এই পরিস্থিতি ঠেকাতে রাজ্য সরকারের ২৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করল কেন্দ্র সরকার।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, গত অর্থবর্ষে পাঠানো ওই প্রকল্পটি কেন্দ্র সরকার অনুমোদন করেছে। ইতিমধ্যেই সেই সংক্রান্ত ফাইল কেন্দ্রীয় অর্থ দফতরেও জমা পড়েছে। প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ হলেই ওই অববাহিকা আমূল সংস্কারের কাজ শুরু হবে। রাজ্য সেচ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘ওই প্রকল্পটি বাস্তব রূপ পেলে বর্ধমান, হুগলি এবং হাওড়ার বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হবে।’’ কিন্তু কবে কেন্দ্র টাকা পাঠাবে সে ব্যাপারে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি ওই আধিকারিক।
ফি-বছর বর্ষায় মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর, রূপনারায়ণ এবং আমোদরের জলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয় তিন জেলার বহু গ্রামবাসীকে। বন্যায় ঘর-গেরস্থালি ভেসে যায়। প্রাণহানি হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই নিম্ন দামোদর অববাহিকায় বন্যা ঠেকাতে ‘মাস্টার প্ল্যান’-এর পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার।
কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ফের বর্ষা চলে এসেছে রাজ্যে। হুগলি জেলা প্রশাসন এ বার বন্যা ঠেকাতে কতটা তৈরি, তা নিয়ে সম্প্রতি চাঁপাডাঙায় আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জেলার নদী-খাল-বিলের অবস্থার খবর নেন। ডাকাতিয়া এবং রনের খাল সংস্কার নিয়ে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মন্ত্রী অভিযোগ পান। দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের তিনি বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। মন্ত্রী জানান, বর্ষা এসে যাওয়ায় বড় কোনও প্রকল্পে এখনই হাত দেওয়া যাবে না। তবে, ছোট এবং মাঝারি প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
আরামবাগ মহকুমার পাশাপাশি জেলার চুঁচুড়া সদর মহকুমার বলাগড় ছাড়াও তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া, হরিপাল এবং চণ্ডীতলার একাংশও বন্যাপ্রবণ। ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় আগাম কাজ শুরু করতে হবে। নদীবাঁধের দুর্বল জায়গা মেরামতর করতে হবে। সেই মতো সেচ দফতরের আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিরা দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী, দামোদরের বিভিন্ন বাঁধ ঘুরে দেখেন। বাঁধের দুর্বল জায়গায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
তবে, আরামবাগ মহকুমার বন্যা রুখতে প্রশাসন ‘আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান’ করতে চাইছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার বিভিন্ন নদী এবং খাল-বিল সংস্কার নিয়ে কয়েক মাস ধরে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। বর্ষা কেটে গেলে সমীক্ষা শেষ করা হবে। সরকারি আধিকারিকদের অভিজ্ঞতা, বন্যার কিছু দিন পর থেকেই খাল-বিলে জল অনেকটা কমে যায়। ফলে চাষিরা সমস্যায় পড়েন। আরামবাগের কানা দ্বারকেশ্বর, ভোমরা বা গোঘাটের আমোদর নদ কিংবা দলকার জলা নিয়ে এই সমস্যায় ভোগেন গ্রামবাসীরা। আধিকারিকদের বক্তব্য, বর্ষায় গ্রাম ভাসায় আর তার পরে জল থাকে না। ওই মাস্টার প্ল্যানে বন্যার জল ধরে রেখে পরে তা চাষের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হবে। সে জন্য স্লুইস গেট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হবে। চলতি অধিবেশনে বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে আমোদর নদ এবং দলকার জলার প্রসঙ্গ তোলেন গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার।
বিধায়ক হওয়ার আগে মানসবাবু ছিলেন হুগলি জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘বিগত বছরগুলির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আগেভাগেই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আর নিম্ন দামোদর অববাহিকা এবং আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হলে জেলাবাসী বন্যার কবল থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবেন বলেই আমাদের আশা।’’