মোদীর সভার প্রতিবাদে পথে

কেন্দ্রের ‘কৃষক দরদী’ ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টার সমালোচনা করে বেচারামের দাবি, ‘‘বিজেপি-র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, কেন্দ্রীয় নীতির ফলে চাষে কৃষকের খরচের উপর মোট ৫০ শতাংশ হারে লাভ হবে। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা দেনায় জর্জরিত হয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য রাজ্যের চাষিরা কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য পেলেও পশ্চিমবঙ্গের চাষিরা বঞ্চিতই থাকেন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিঙ্গুর ও জয়পুর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ২৩:৫৮
Share:

প্রতিবাদ: চাষিদের কালো ব্যাজ পরাচ্ছেন বেচারাম। নিজস্ব চিত্র

কৃষিপণ্যে পরিবহণ খরচ বাড়ছে বলে কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কারও দাবি, কেন্দ্র কিছুই করছে না!

Advertisement

এলাকার চাষিদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ‘কৃষক কল্যাণ সমাবেশ’-এ মেদিনীপুরে আসার দিনেই সিঙ্গুরে মাঠে নেমে পড়ল শাসকদলের কিসান ও খেতমজুর সমিতি। প্রধানমন্ত্রীর সভার প্রতিবাদে সিঙ্গুরের চাষিদের কালো ব্যাজ পরানো হল। কৃষকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসা মেকি বলেও অভিযোগ তুলল ওই সংগঠন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ‘অভিনন্দন’ কুড়োতে এসেছেন। কিন্তু সিঙ্গুরের বরামবাটীর চাষি গঙ্গারাম বাগের ক্ষোভ, ‘‘কেন্দ্র বলেছিল, কৃষিঋণ মকুব করা হবে এবং ঋণের পরিমাণও বাড়বে। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ বুড়ি গ্রামের চাষি বিশ্বেশ্বর বাগ বলেন, ‘‘পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষিপণ্যে পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। ডিজেলের দামবৃদ্ধিতে সেচের খরচও এখন অনেক বেশি। তাই চাষ করে আমাদের লাভ দূরে থাক অনেক ক্ষেত্রে খরচও উঠছে না।’’

Advertisement

গাড়ি কারখানার জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে এক সময়ে এই সিঙ্গুরেই আন্দোলনে নেমেছিল তৃণমূল। চাষিদের স্বার্থে তাই এ দিন তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের পথে নামা। শুধু সিঙ্গুরেই নয়, রাজ্যের সব ব্লকেই ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে চাষিদের কালো ব্যাজ পরানো এবং মিছিল-পথসভার আয়োজন করা হয় বলে জানানো হয়েছে।

এ দিন সিঙ্গুরের বুড়ি গ্রামে চাষিদের কালো ব্যাজ পরিয়ে দেন ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না। কেন্দ্রের ‘কৃষক দরদী’ ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টার সমালোচনা করে বেচারামের দাবি, ‘‘বিজেপি-র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, কেন্দ্রীয় নীতির ফলে চাষে কৃষকের খরচের উপর মোট ৫০ শতাংশ হারে লাভ হবে। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা দেনায় জর্জরিত হয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য রাজ্যের চাষিরা কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য পেলেও পশ্চিমবঙ্গের চাষিরা বঞ্চিতই থাকেন।’’

প্রধানমন্ত্রীর সভার প্রতিবাদে তারকেশ্বরের রামনারায়ণপুর থেকে চাঁপাডাঙা পর্যন্ত মিছিল করে ওই সংগঠন। জেলার বিধায়কেরা তাতে সামিল হন। হাওড়ার জয়পুরে জেলা যুব তৃণমূল আয়োজিত ২১ জুলাই-এর প্রস্তুতিসভাতেও মোদীর সমালোচনা হয়। গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক চাষিদের ঋণ দেয় না। তাঁদের ঋণের জন্য ভরসা করতে হয় সমবায় ব্যাঙ্কগুলির উপরে। সমবায় ব্যাঙ্কগুলিই সবসময় চাষিদের পাশে থাকে।’’ ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন পুলকবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘চাষের খরচ যে ভাবে বেড়েছে, তাতে ওই দাম যথেষ্ট নয়। এতে হিতে বিপরীত হবে। বাড়তি মূল্য নিজেদের পকেটস্থ করার জন্য ফড়েরা আরও বেশি করে বাজারে নেমে পড়বে। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফসলের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করতে হবে।’’

এ দিনই প্রধানমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে বিজেপি কর্মীদের বাস আটকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বাস লক্ষ্য করে ইটও ছোড়া হয়। গোঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ বিষয়ে বিজেপির তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন