উৎসব শেষ, শহরের রাস্তা ভরেছে আবর্জনায়

ইতিউতি হাওয়ায় উড়ছে শোলার বাটি। রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া খাবার নিয়ে টানাটানি করছে কুকুর আর কাক। পথ চলতে অনেক জায়গায় আবার নাকে রুমাল দিচ্ছেন মানুষ।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

গঙ্গার ঘাট পরিষ্কার হলেও এখনও আবর্জনা জমে রাস্তাঘাটে।ছবি: তাপস ঘোষ।

ইতিউতি হাওয়ায় উড়ছে শোলার বাটি।

Advertisement

রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া খাবার নিয়ে টানাটানি করছে কুকুর আর কাক।

পথ চলতে অনেক জায়গায় আবার নাকে রুমাল দিচ্ছেন মানুষ।

Advertisement

জগদ্ধাত্রী পুজো শেষ। তার পরে চন্দননগরের রাস্তায় আবর্জনা জমে থাকার ছবিটায় বদল হল না এ বারেও। শনিবার বারবেলাতেও রানিঘাট লাগোয়া মহকুমাশাসকের অফিসের সামনের ভ্যাট বা উর্দিবাজারের ফাস্টফুডের অস্থায়ী স্টলের পাশে আবর্জনা জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। জি টি রোড বা অন্য কয়েকটি রাস্তার ধারেও জমা থাকা আবর্জনা উড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে আশপাশে।

অথচ, এ বারই হুগলিকে ‘নির্মল জেলা’ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শহরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পরিবেশপ্রেমীরা ভেবেছিলেন, আবর্জনা জমে থাকার চেনা ছবিটার এ বার বদল হবে। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে পুরকর্মীরা শহর সাফসুতরো করতে নামলেও বিকেল পর্যন্ত অনেক জায়গাতেই আবর্জনা জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। অবশ্য পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে রানিঘাট। যেখানে শহরের সব জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে দু’দিন ধরে।

চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘২৫ জন কর্মী গঙ্গার ঘাট পরিষ্কারে কাজ করছেন। শহর দ্রুত সাফাইয়ে ১০০ কর্মীকে কাজে লাগানো হয়েছে।’’

কিন্তু পুলিশের হিসেব বলছে, উৎসবের দিনগুলিতে শহরে গড়ে তিন লক্ষ মানুষ আসেন। দশমীতে বিসর্জনের শোভাযাত্রার রুট বরাবর বহু খাবারের স্টল বসে। রাতভর রাস্তার ধারে মানুষ বিসর্জন দেখেন। একই সঙ্গে চলে খাওয়া-দাওয়া। ফুচকা, ভেলপুরি, চিকেন পকৌড়া, বিরিয়ানি, রোল— কী নেই! কিন্তু সেই সব খাবারের প্যাকেট বা অবশিষ্ট অংশ ফেলে দেওয়া হয় রাস্তাতেই। একদিনের চেষ্টায় সেই আবর্জনা সরিয়ে শহরকে পুরনো চেহারায় ফেরানো কার্যত অসম্ভব।

দশমীতে রাতভর যে সব পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় সামিল হয়, তারা প্রতিমা নিরঞ্জন করে পরের দিন। সেই নিরঞ্জন পর্ব সকাল থেকে শুরু হয়ে অনেক সময়েই বিকেল গড়িয়ে যায়। ভিড়ও থেকে যায় পুরো সময়।

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পরিবেশপ্রেমীদের আক্ষেপ, পুরসভার নিজস্ব যা পরিকাঠামো আছে, তা দিয়েই আবর্জনা মোকাবিলা সম্ভব। আগাম পরিকল্পনা করলেই আবর্জনার ছবিটা বদলাতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, যে পরিমাণ খাবারের স্টল হয়, তার সাপেক্ষে পুরসভার তরফে ভ্যাটের সংখ্যা নগণ্য। সেই কারণে ভ্যাট উপছে হাওয়ায় আবর্জনা ওড়ে। তাই পর্যাপ্ত ভ্যাটের ব্যবস্থা এবং নির্দিষ্ট সময়ে সেগুলি পরিষ্কার করা হলে সমস্যা বাড়ে না। কেউ শহর নোংরা করলে পুলিশি হস্তক্ষেপ জরুরি। প্রচুর ‘গ্রিন টয়লেট’-এর পক্ষেও সওয়াল করেন তাঁরা।

শহরের বাসিন্দা তথা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোর দিনগুলিতে জমা আবর্জনা পরিষ্কারে পুর কর্তৃপক্ষের ভাল খরচ হয়। ঠাকুর দেখতে এসে অনেক খরচ করেন দর্শনার্থীরা। শহরে ঢোকার জন্য পুর কর্তৃপক্ষ সামান্য কিছু প্রবেশমূল্য ধার্য করলে সেই টাকা শহর পরিষ্কারের কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে শহরে দূষণের মাত্রাও কমে।’’ এখন দেখার, পুর কর্তৃপক্ষ আগামী বছরের জন্য কী ব্যবস্থা নেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন