সাত মাস ধরে শূন্য ছিল পদ। সেই পদের দৌড়ে ছিলেন অনেকেই। শেষেমেশ হুগলি জেলা টিএমসিপির নতুন সভাপতি হলেন পুরশুড়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য গোপাল রায়। যিনি আরামবাগ নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যার পার্শ্বশিক্ষক এবং ওই বিষয়ে পিএইচ-ও করছেন। তবু তাঁর পদপ্রাপ্তি ঘিরে প্রশ্ন উঠল দল ও ওই সংগঠনের অন্দরেই।
পুরশুড়া ব্লক তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘হেতমচকে দামোদর এবং গোপীমোহনপুরে মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার সঙ্গে ওঁর নাম রয়েছে। বালি-মাফিয়াদের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ সকলের জানা।’’ জেলা টিএমসিপি-র একাংশের বক্তব্য, ২৭-২৮ বছরের বেশি বয়সী কাউকে ওই পদে বসানো যাবে না বলে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। গোপালের বয়স ৩২। তা ছাড়া, সম্প্রতি সংগঠনের তরফে তাঁর দায়িত্বে থাকা একাধিক কলেজে গোলমাল হয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ সংগঠনের রাশ কী ভাবে তিনি নিজের হাতে রাখবেন, এমন প্রশ্নও রয়েছে। এক টিএমসিপি নেত্রীর কথায়, ‘‘গোপাল দলের মূল শাখায় রাজনীতি করেন। কী এমন হল যে তাকে ছাত্র-রাজনীতিতে যুক্ত করা হল? যাঁরা প্রকৃত ছাত্র-রাজনীতি করছেন, তাঁদের মধ্যে ভাল কাউকে পাওয়া গেল না?’’
টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘গোপাল ছাত্র-রাজনীতিতেই ছিলেন। ভাল কাজ করায় ওঁকে পঞ্চায়েত সমিতিতে টিকিট দেওয়া হয়। ওঁর বয়স ঠিকঠাকই আছে। পিএইচডি করছেন। এ ব্যাপারে যাঁরা অন্য কথা বলছেন, ঠিক বলছেন না।’’
কী বলছেন নতুন সভাপতি?
গোপাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কলেজের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করব। কোথাও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বালি-খাদানের সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। যাঁরা এমনটা বলছেন, অসত্য বলছেন। আদর্শ থেকে আমাদের সরানো যাবে না।’’
কলেজে গোষ্ঠী-কোন্দল সামাল দিতে না-পারার কারণ দেখিয়ে গত বছরের অগস্টে জেলার পূর্বতন টিএমসিপি সভাপতি শুভজিৎ সাউকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে সংগঠনের ছন্নছাড়া দশা হয়। কমিটি ভেঙে যাওয়ার পরে গোপাল-সহ তিন জন সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ছাত্র-ভোট ঘিরে চাঁপাডাঙা কলেজ, শ্রীরামপুর কলেজ-সহ বিভিন্ন কলেজ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঠেকানো যায়নি। সভাপতি পদে নানা নাম নিয়ে জল্পনা যখন বাড়ছে, তখনই জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয়পাত্র, পুড়শুড়ার তকিপুরের বাসিন্দা গোপালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল।