পুজোয় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য হুগলিতে

আইসিইউতে ঢুকে অস্ত্র হাতে তাণ্ডব

বলিউডের থ্রিলার সিনেমা নয়। শনিবার, দশমীর সকালে দুষ্কৃতীদের এমনই দাপাদাপি দেখা গেল শ্রীরামপুর শহরের এক নার্সিংহোমে। আইসিইউ-তেও চড়াও হয়েছিল তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০২
Share:

চিহ্নিত: সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে এই দু’জনের ছবি।— নিজস্ব চিত্র।

আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে শাসাচ্ছে এক যুবক। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে শৌচাগারে ঢুকছেন নার্স, আয়া। চড়থাপ্পড় পড়ছে নার্সিংহোম কর্মীদের পিঠে, গালে। মুমূর্ষু রোগীরা ভয়ে জবুথবু।

Advertisement

বলিউডের থ্রিলার সিনেমা নয়। শনিবার, দশমীর সকালে দুষ্কৃতীদের এমনই দাপাদাপি দেখা গেল শ্রীরামপুর শহরের এক নার্সিংহোমে। আইসিইউ-তেও চড়াও হয়েছিল তারা। দুর্ঘটনায় আহত সঙ্গীর দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে, এই দাবিতেই দুষ্কৃতীদের ওই আস্ফালন বলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।

এই ঘটনায় ফের হুগলিতে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যের ছবিটা সামনে চলে এল। শারদোৎসবকে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ এবং চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট যে চেষ্টা করেনি, তা নয়। কিন্তু পুজোর শুরু থেকে শেষ— দেখা গেল, দুষ্কৃতীরা বেলাগামই। পঞ্চমীর বিকেলে দাদপুরের গোপীনাথপুরে মদের আসরে গুলিতে খুন হয়েছিলেন চুঁচুড়ার ধরমপুরের এক যুবক। তার পরে দশমীর সকালে শ্রীরামপুরের ঘটনা।

Advertisement

জিটি রোডের ধারের ওই নার্সিংহোমে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ছবি ধরা পড়েছে সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরায়। ওই ফুটেজ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রবিবার সন্ধ্যায় রাজেশ সিংহ নামে শ্রীরামপুরের রামপুরিয়া এলাকার এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ জানায়, জেরায় ধৃত দাবি করেছে, তাদের আহত সঙ্গীর চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় ভয় দেখাতে তারা ওই কাণ্ড করেছে। ফুটেজে রাজেশের হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখে বাকি দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই ধরা পড়বে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম এক যুবককে নিয়ে ১৫-২০ জন ওই নার্সিংহোমে আসে। আহতের নাক, মুখ-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা কেটে-ছড়ে গিয়েছি‌ল। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঢুকেই ওই যুবকেরা হইচই জুড়ে দেয়। দ্রুত চিকিৎসা শুরুর দাবি তোলে। সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরুও হয়। এর মধ্যে আহত জানায়, তার পেটে ব্যথা করছে। তাঁকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গীরা বলতে শুরু করে, চিকিৎসায় ফল হচ্ছে না। আহতকে অন্যত্র নিয়ে যাবে তারা। সেই মতো ট্রলিতে চাপিয়ে যুবককে নার্সিংহোমের বাইরে আনা হয়। এ সবের মধ্যেই কয়েক জন নার্সিংহোম কর্মীদের উপর চড়াও হয়।

সেই সময় ‘রিসেপশনে’ ছিলেন সোমনাথ ভড়। তিনি বলেন, ‘‘আচমকা ছেলেগুলো মারধর শুরু করে। আমাকে কিল, চড়, ঘুষি মারে। ছুটে পালাই। একটা ছেলে আইসিইউ-তে ঢুকে রিভলভার হাতে শাসাতে থাকে। ওয়ার্ডে চার জন নার্স ছিলেন। তাঁরা ভয়ে শৌচাগারে ঢুকে পড়েন।’’ এর পরে আহত যুবককে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তারা চলে যায়। ঘটনার সময় কোনও নিরাপত্তারক্ষী অবশ্য ছিলেন না। তবে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও মারমুখী সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের আদৌ সামলানো যেত না বলেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের ধারণা। নার্সিংহোমের কর্ণধার, চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ দে’র দাবি, ‘‘হামলাকারীরা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাদের চাপে আহতের নাম-ঠিকানা না নিয়েই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই দুষ্কৃতীরা হাঙ্গামা শুরু করে দেয়।’’

খবর পেয়ে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সন্ধ্যায় নার্সিংহোমের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনার জেরে নার্সিংহোমের কর্মীরা আতঙ্কিত। একদিন পরেও সেই আতঙ্ক কাটেনি। রবিবার তাঁরা জানান, উৎসবের রাতে ‘ডিউটি’ করতে তাঁদের নতুন করে ভাবতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন