চন্দননগর জুড়ে কাটআউট

নায়ক বরণে ঢাকা পড়ল জিটি রোড

চন্দনগরের রাস্তার দু’ধারে তখন মেলার ভিড়। স্রেফ ঈশানকে দেখার জন্য। কেউ ফুল ছুড়ছেন। কেউ চেঁচাচ্ছেন। জিপের পিছনে ছুটছে খুদেরা। কেউ হাতে তুলে দিলেন ক্ষিরের ব্যাট-বল-উইকেট।

Advertisement

প্রকাশ পাল এবং তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

সংবর্ধনা: ঈশানের সঙ্গে মঞ্চে লক্ষ্মীরতন শুক্ল। নিজস্ব চিত্র

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর দুরন্ত বোলিং টিভিতে দেখেছিলেন। চন্দননগর পালপাড়ার ৮৬ বছরের অনিল মাঝি পরে জানতে পারেন‌, ছেলেটা এই শহরেই থাকে। বিশ্বজয় করে ফেরা ছেলেটাকে দেখতে বুধবার সাতসকালেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। হুডখোলা জিপে আগুয়ান ঈশান পোড়েলকে দেখেই হাত নাড়তে নাড়তে আশীর্বাদ ছুড়ে দিলেন অনিলবাবু, ‘‘আরও এগিয়ে যা, বাবা।’’

Advertisement

চন্দনগরের রাস্তার দু’ধারে তখন মেলার ভিড়। স্রেফ ঈশানকে দেখার জন্য। কেউ ফুল ছুড়ছেন। কেউ চেঁচাচ্ছেন। জিপের পিছনে ছুটছে খুদেরা। কেউ হাতে তুলে দিলেন ক্ষিরের ব্যাট-বল-উইকেট। কেউ তাঁর জন্য এনেছিলেন ফুলের তোড়া। সব মিলিয়ে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈশানে মাতল গঙ্গাপাড়ের শহর চন্দননগর।

অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতে কিউইদের দেশ থেকে মঙ্গলবার সকালেই কলকাতায় ফেরেন ঈশান। ওই রাতে সল্টলেকে পর্যটন দফতরের অতিথিশালায় ছিলেন। বুধবার সকালে কলকাতা থেকে সরাসরি ভদ্রেশ্বর পুরসভায় আসেন জাতীয় যুব দলের পেসার। সেখান থেকে সকাল ৯টা নাগাদ হুডখোলা জিপে তাঁকে নিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। বারাসাত গেট থেকে জ্যোতির মোড় হয়ে সম্বলা শিবতলায় নিজের পাড়ায় পৌঁছন ঈশান। তবে বাড়িতে ঢোকেননি। বড়দের আশীর্বাদ নিয়ে, পাড়ার মন্দিরে প্রণাম সেরে সাদা পায়রা ওড়ান ঈশান। এর পরে জিটি রোড ধরে বাগাবাজার, পালপাড়া রোড, তালডাঙা, গঞ্জের বাজার, উর্দিবাজার, রানিঘাট— এগিয়ে চলে শোভাযাত্রা। জিপে চালকের পাশের আসনে মা রিতাদেবী, মাঝে বাবা চন্দ্রনাথবাবুকে নিয়ে ক্রমাগত হাত নেড়ে গিয়েছেন চন্দননগরের নতুন নায়ক। ঈশানের হাতে ক্ষিরের ব্যাট-বল-উইকেট তুলে দেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী প্রণব শীল।

Advertisement

শোভাযাত্রা শেষ হয় স্ট্র্যান্ডের জোড়াঘাটে। সেখানে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন এবং পুরসভা। ঈশান পৌঁছনোর আগেই এসে গিয়েছি‌লেন রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল। কিছুদিন আগে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন শহরের মেয়র রাম চক্রবর্তী। এর পর থেকে তাঁকে জনসমক্ষে বিশেষ দেখা যায়নি। এ দিন তিনিও হাজির সংবর্ধনা সভায়।

শহর জুড়ে নিজের কাটআউট, হোর্ডিং দেখে আপ্লুত ঈশান। জানালেন, সাফল্যের পিছনে দুই কোচ প্রদীপ মণ্ডল এবং বিভাস দাসের অবদানের কথা। তাঁর কথায়, ‘‘এত ভালবাসায় আমি আপ্লুত। চেষ্টা করব দেশের হয়ে আরও ভাল খেলে চন্দননগরের নাম উজ্জ্বল করতে।’’ চন্দ্রনাথবাবু পরে বলেন, ‘‘ছেলের সাফল্যের নেপথ্যে চন্দননগর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনেরও অবদান রয়েছে। কয়েক বছর আগে অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাম্পে সিএবি-র পাঠানো কোচের কাছে প্রশিক্ষণ
নিয়েছিলেন ঈশান।।’’

শহর আবেগে মাতলেও চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের ক্রিকেট সচিব রাজীব ঘোষের ক্ষোভ, ঈশানের সংবর্ধনা নিয়ে ক্রিকেট সাব-কমিটিকে কার্যত ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল। রাজীববাবু বলেন, ‘‘বুধবার সকালে সংবর্ধনা। মঙ্গলবার রাতে একটা এসএমএস করে বিষয়টি জানানো হয়।’’ স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বামাপদ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘স্বল্প সময়ে আয়োজন হয়েছে। ক্রিকেট সাব-কমিটিকে এসএমএসের পাশাপাশি ফোনেও জানিয়েছি। তা ছাড়া ক্রিকেট সাব-কমিটি তো অ্যাসোসিয়েশনেরই অঙ্গ। ব্রাত্য রাখার অভিযোগ ঠিক নয়।’’

এ সব নিয়ে সাধারণ মানুষ মাথা ঘামাননি। কেউ ব্যস্ত ছিলেন শহরের নতুন নায়কের অটোগ্রাফ নিতে, কেউ নিজস্বী তুলতে, কেউ বা হাত মেলাতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement