চেয়ারম্যানকে বলেও কাজ হয়নি, অভিযোগ

আরামবাগ জতুগৃহ, দাবি দমকলেরই

হাসপাতাল রোডের পুরসভা সুপার মার্কেটেও কোথাও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সেখানেও স্টোভ-গ্যাস জ্বালিয়ে চা ও অন্যান্য রান্না হয়। মিটার ঘরটির অবস্থাও বিপজ্জনক। একই ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বি কে রায় সুপার মার্কেট, নজরুল মার্কেট, সুকান্ত মার্কেট, বসন্তপুরের মিনি মার্কেট, সদরঘাটের ব্যক্তি-মালিকানাধীন পুরনো সব্জি মার্কেট এবং কয়েকটি লজ-নার্সিংহোমকে ঘিরেও।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০২:৩৭
Share:

অগ্নিবলয়: আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডের উপরের মার্কেটের একটি রেস্তোঁরার ভিতরে এভাবেই চলে রান্না। ছবি: মোহন দাস

কোথাও শুকনো কলাপাতা, শালপাতার আবর্জনা। কোথাও মিটার-ঘরে বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে বিদ্যুতের তার।

Advertisement

বছর কয়েক আগে আরামবাগ শহরের ব্যস্ত জায়গাগুলিতে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে কয়েক দফা সুপারিশ করেছিল দমকল। কিন্তু কোথাও তা কার্যকর হয়নি। ফলে, সুপার মার্কেট, নার্সিংহোম, লজ, বাসস্ট্যান্ড, সিনেমা হলের মতো জায়গাগুলির অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও প্রশ্নের মুখেই রয়ে গিয়েছে। উদ্বিগ্ন শহরবাসীর অভিযোগ, এ নিয়ে প্রশাসন এবং পুরসভা উদাসীন। দমকল বিভাগই বলছে, গোটা শহরটাই যেন জতুগৃহ!

দমকল বাহিনীর আরামবাগের ওসি সুজিত মোহান্তি বলেন, “নির্দেশ পেলেই আমরা অভিযান চালাব। কোথাও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। পুরো শহর জতুগৃহ! পুরসভার চেয়ারম্যানকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।” পুরপ্রধান স্বপন নন্দী বলেন, “দমকলের নির্দিষ্ট ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বলা হয়েছে। আগুন নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছি। শীঘ্রই মহকুমাশাসক এবং দমকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ডের উপরেই তিন তলা বিজয় মোদক সুপার মার্কেট। সেখানে দেড়শোরও বেশি দোকান ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরু করিডরের দু’পাশে ঘিঞ্জি দোকান। অনেক দোকানে স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না হয়। দোতলায় দু’টি হোটেলও রয়েছে। কিন্তু কোথাও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। সিঁড়ি এবং মার্কেটের বিভিন্ন কোণে আবর্জনার স্তূপ রোজই চোখে পড়ে সাধারণ মানুষের। সর্বত্র জলের সংযোগও নেই। আগুন লাগলে দমকল পরিষেবার জন্য বাসস্ট্যন্ডের একটি জায়গা ফাঁকা রাখা হলেও সেখানে সব সময় যে ভাবে বাসের ভিড় থাকে, তাতে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে বেগ পাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে শহরবাসীর।

হাসপাতাল রোডের পুরসভা সুপার মার্কেটেও কোথাও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সেখানেও স্টোভ-গ্যাস জ্বালিয়ে চা ও অন্যান্য রান্না হয়। মিটার ঘরটির অবস্থাও বিপজ্জনক। একই ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বি কে রায় সুপার মার্কেট, নজরুল মার্কেট, সুকান্ত মার্কেট, বসন্তপুরের মিনি মার্কেট, সদরঘাটের ব্যক্তি-মালিকানাধীন পুরনো সব্জি মার্কেট এবং কয়েকটি লজ-নার্সিংহোমকে ঘিরেও।

অথচ, এ সব অব্যবস্থা রুখতে বছর কয়েক আগেই উদ্যোগী হয়েছিল দমকল। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশে ট্রেড লাইসেন্স এবং দমকলে বৈধ শংসাপত্র নেওয়া আছে কিনা খতিয়ে দেখার জন্য অভিযান চালানো হয়েছিল। অগ্নি সুরক্ষা নিয়ে কী করণীয় তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বোঝানো হয়। যেমন, একাধিক তলবিশিষ্ট ভবনের প্রতি তলে জলের লাইন রাখা, ভবনের আয়তন এবং তল অনুযায়ী আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ সিলিন্ডার রাখা, মিটার-ঘর এবং বিদ্যুতের লাইন সংস্কার ইত্যাদি। দমকল দফতরের অভিযোগ, অধিকাংশ জায়গায় এখনও জলের ব্যবস্থা বলতে পানীয় জলের সরু পাইপের ট্যাপকল। কোথাও অগ্নিবিধি মানা হচ্ছে না।

এই অবস্থাটারই বদল চাইছেন শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন