শ্রীরামপুর কলেজে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের

সরানো হল টিএমসিপির হুগলি জেলা সভাপতিকে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০০:২৮
Share:

কলেজে গোষ্ঠীকোন্দল সামাল দিতে না পারায় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) হুগলি জেলা সভাপতি শুভজিৎ সাউকে। ছাত্র সংসদের দখল কার হাতে থাকবে তা নিয়ে সোমবার টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শ্রীরামপুর কলেজ। তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর সরাসরি জড়িয়ে পড়েন কলেজের ঝামেলায়। ওই ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

ঘটনার কথা শুনে ওই দিন টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত জানিয়েছি‌লেন, এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার সকালে জয়া বলেন, ‘‘হুগলির কলেজে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে পারেননি সংগঠনের জেলা সভাপতি। তাই তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে দলে আলোচনা করা হচ্ছে।’’ ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে টিএমসিপি-র হুগলি জেলা সভাপতি হন শুভজিৎ। ৯ বছর বাদে পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে শুভজিতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনে দল করি। দল সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।’’

বেশ কিছু দিন ধরেই শ্রীরামপুর কলেজে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছিল। সম্প্রতি তা চরমে ওঠে ছাত্র সংসদের সভাপতি পদ নিয়ে। ওই কলেজের ছাত্র সংসদের ক্ষমতা রয়েছে টিএমসিপি-র হাতে। ছাত্র সংসদের সভানেত্রী সোনিয়া সিংহ। ২০১৫ সালে তিনি স্নাতক হন। কলেজের নিয়ম মোতাবেক, কোনও পড়ুয়া স্নাতক হয়ে গেলে (পাস আউট) তিনি সংসদের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে পারবেন না। দিন কয়েক আগে ‘ফ্যাকাল্টি’র বৈঠকে ঠিক হয়, সোনিয়াকে সরিয়ে সংসদের সহ-সভাপতি সঞ্জিত রামকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু সোনিয়া বা তাঁর অনুগামীরা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। গোলমাল তা নিয়েই। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভোট না হওয়া পর্যন্ত কারও পদ পরিবর্তন করা যাবে না। সোনিয়ার বিরোধীদের অবশ্য দাবি, অন্যায় ভাবে ওই নেত্রী পদ আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলা হয়। সোনিয়া স্বভাবতই ওই অভিযোগ মানেননি।

Advertisement

সোমবার সঞ্জিত ছাত্র সংসদের সভাপতি হওয়ার চিঠি আনতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল মারামারি হয়। ঝামেলা নিজেদের মধ্যেই থেমে থাকেনি। গোলমালের সময় প্রথম বর্ষে ভর্তি নেওয়ার কাজ চলছিল। গোলমালকারীদের একাংশ অফিসের কাউন্টার বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। টিএমসিপি নেতা-কর্মীদের রণমূর্তি দেখে ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকরা ভয় পেয়ে যান। মারামারিতে দু’পক্ষের কয়েক জন আহত হন। তাঁদের শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মারামারি হয় সেখানেও। হেলমেটের আঘাতে এক জনের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।

সন্ধ্যায় বিধায়ক সুদীপ্ত রায় শহরের বটতলা এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে বিবদমান দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, কার্যালয়ের মধ্যেই তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে দলের এক মহিলা কাউন্সিলর মাটিতে পড়ে যান। পরিস্থিতি দেখে অসন্তুষ্ট বিধায়ক জানান, তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করবেন। তা দেখে প্রকৃত দোষী কারা তা বের করার চেষ্টা করা হবে। তার পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত দলের ছাত্রনেতাদের কলেজে সংগঠনের কাজ করতেও নিষেধ করা হয়। পরে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে জিটি রোডেও একপ্রস্থ ঠেলাঠেলি হয় দু’পক্ষের মধ্যে। যানজট হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। মঙ্গলবার বিবদমান ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশকেই কলেজ চত্বরে দেখা যায়নি।

ছাত্রছাত্রীদের একাংশের বক্তব্য, তৃণমূল বা দলের ছাত্র সংগঠন কোনও পক্ষই ওই কলেজে ছাত্রনেতা বা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সেই কারণেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিছু কাউন্সিলর কলেজের ছাত্র সংসদের ব্যাপারে সরাসরি নাক গলাচ্ছেন। তাঁরাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন পড়ুয়াদের অনেকেই। বিধায়ক সুদীপ্তবাবু শুধু বলেন, ‘‘দু’পক্ষই আমার কাছে এসেছিল। ওদের কথা শুনেছি। তবে ছাত্র সংসদের ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা টিএমসিপি নেতৃত্বই নেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন