শ্রীশ-স্মৃতিতে রসপুরে পতাকা ওঠে ২৬ অগস্ট

পরের দিনই বৌবাজারের গোপন আস্তানায় হানা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে বেশ কয়েকজন বিপ্লবীকে, উদ্ধার হয় লুঠ হওয়া বেশিরভাগ পিস্তল ও কার্তুজ। কিন্তু ধরা পড়েননি শ্রীশ মিত্র। আজও তাঁর খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

নুরুল আবসার

আমতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৩
Share:

স্মরণে: বিপ্লবী শ্রীশ মিত্রের স্মৃতি-স্তম্ভ। ছবি: সুব্রত জানা

বিপ্লবের প্রয়োজনে অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর উপর। সদ্য যুবা শ্রীশ মিত্র তখন চাকরি পেয়েছেন মেসার্স আরবি রডা নামে ডালহৌসির এক অস্ত্র কারবারি সংস্থায়। ১৯১৪ সালের ২৬ অগস্ট সংস্থার অস্ত্র বোঝাই গাড়ি নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যান শ্রীশ। সে বার অবশ্য সফল হয়নি সে পরিকল্পনা। পরের দিনই বৌবাজারের গোপন আস্তানায় হানা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে বেশ কয়েকজন বিপ্লবীকে, উদ্ধার হয় লুঠ হওয়া বেশিরভাগ পিস্তল ও কার্তুজ। কিন্তু ধরা পড়েননি শ্রীশ মিত্র। আজও তাঁর খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শ্রীশ মিত্রের উধাও হয়ে যাওয়া যেন মনে করিয়ে দেয় নেতাজিকে। আজও জানা যায়নি তাঁর শেষ জীবনের কথা। হাওড়া জেলার আমতা ব্লকের রসপুর গ্রামেই জন্ম শ্রীশ মিত্রের। গ্রামের ডানপিটে হাবুর মন ছিল না প়ড়াশোনায়। বরং শরীরচর্চাতেই ছিল বেশি আগ্রহ। আর ভালবাসত খাওয়াতে— এলাকার যত গরিব দুঃখী, সকলকে ডেকে খাওয়াতেন।

বেশিদিন অবশ্য গ্রামের বাড়িতে থাকেননি শ্রীশ। দূরন্ত নাতির মতিস্থির করতে কলকাতায় নিয়ে যান তাঁর দাদু। বৌবাজারে থেকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়েই শ্রীশ জড়িয়ে পড়েন সশস্ত্র বিপ্লবের সঙ্গে।

Advertisement

শ্রীশ মিত্রের উপরে পড়ে অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব। ১৯১৪ সালে আরবি রডা ৫০টি জার্মান পিস্তল এবং ৫০ হাজার কার্তুজের বরাত পায়। শ্রীশ মিত্রের উপরে দায়িত্ব পড়েছিল কলকাতা কাস্টমস থেকে অস্ত্রগুলি ডালহৌসিতে সংস্থার গুদামে আনার। ২৬ অগস্ট দুপুরে অস্ত্র বোঝাই কয়েকটি গাড়ি আসছিল গুদামঘরের দিকে।

কিন্তু একটি গাড়ি পথ বদলালো মাঝপথে। গুদাম পর্যন্ত না গিয়ে, চালক সোজা চলে গেলেন বৌবাজারের বিপ্লবীদের গোপন আস্তানায়। উধাও হয়ে গেলেন শ্রীশ মিত্রও। পরের দিন ব্রিটিশ পুলিশ বৌবাজারে হানা দিয়ে রিভলভার এবং কার্তুজের বেশিরভাগটাই উদ্ধার করে ফেলে। ধরা পড়েন কয়েকজন বিপ্লবী। কিন্তু অস্ত্র লুঠের প্রধান পান্ডার খোঁজ পায়নি পুলিশ।

বিভিন্ন উৎস থেকে এটুকু তথ্যই সংগ্রহ করতে পেরেছে ‘শ্রীশ মিত্র স্মারক কমিটি’। কমিটির সম্পাদক অসীম মিত্র বলেন, ‘‘শ্রীশ মিত্রের জন্ম তারিখ বা সাল উদ্ধার করতে পারিনি। আবার তাঁর শেষ জীবনও আমাদের আজানাই রয়ে গিয়েছে।’’ তাই দিনক্ষণের হিসাব মিলিয়ে ২৬ অগস্ট রডা অস্ত্র লুঠের দিনটিকেই স্মরণ করে রসপুর গ্রাম। স্থানীয় ‘পিপলস লাইব্রেরি’ মাঠে রয়েছে শ্রীশ মিত্র স্মারকস্তম্ভ। ১৯৮৩ সালে তৈরি করা হয়েছে সেটি। প্রতি বছর ২৩ ও ২৬ জানুয়ারি, ১৫ অগস্ট জাতীয় পতাকা তোলা হয় সেখানে। পতাকা তোলা হয় ২৬ অগস্টও। এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে শ্রীশ মিত্রের জন্মভিটে। সেখানে এখন ভাঙা ইটের স্তূপ। একসময়ে সেখানেও জাতীয় পতাকা তুলতেন গ্রামবাসীরা। ২০১৩ সালের পর থেকে তা করা হয় না।

অসীমবাবু বলেন, ‘‘বাস্তুভিটার মাল‌িকানা নিয়ে মিত্র পরিবারের শরিকদের মধ্যে গোলমাল বেধেছে। তাই ওখানে আর আমরা যাই না।’’ গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও জানেন বিপ্লবীর নাম। শুধু তাই নয়, বিপ্লবীর ইতিহাস যতটুকু জানা যায়— সবটাই জানে তারা। কিন্তু জন্ম সালটুকু উদ্ধার করতে বা বাস্তুভিটা সংরক্ষণে আগ্রহ নেই প্রশাসনের। তা নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

দামোদরের তীরে ছবির মত গ্রাম রসপুর। নদী বাঁধে আমতা থেকে বালিচক পর্যন্ত তৈরি হয়েছে রাস্তা। স্থানীয় তপন মণ্ডল, মুস্তাক মণ্ডলের মত মানুষেরা বললেন, ‘‘এই রাস্তা শ্রীশ মিত্রের নামে করার দাবি জানাচ্ছি বহু বছর ধরে। প্রশাসন কিছুই করে না।’’

রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্লে বলেন, ‘‘রাস্তার নামকরণের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। গ্রামবাসীদের দাবি মেনে স্মারক স্তম্ভটিকে নতুন ভাবে সাজানোরও পরিকল্পনা করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন