নাগরিকদের উন্নত পরিষেবা পৌঁছে দিতে তহবিল মজুত। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সেই তহবিল খরচই হচ্ছে না। রাজনৈতিক খবরদারিতে এমনই দিশাহীন অবস্থা তৃণমূল পরিচালিত আরামবাগের হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েতে।
নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ তো বটেই এমনকী চতুর্দশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ হওয়া প্রথম কিস্তির টাকার প্রায় পুরোটাই খরচ না হয়ে পড়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থের জোগানের সমস্যা তুলে ধরেন, সেখানে রাজ্যেরই একটি পঞ্চায়েতে এমন অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা।
মোট ১৬ সদস্যের বিরোধীশূন্য হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েতটি আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন হলেও পুড়শুড়া বিধানসভা এলাকায় পড়ে। ফলে বোর্ড গঠন থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের পুড়শুড়া গোষ্ঠী এবং আরামবাগ গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল অব্যাহত। আবার মুণ্ডেশ্বরী নদীর বালিখাদ দখল নিয়ে দু’পক্ষের লাগাতার সংঘর্ষে এলাকা মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের খবরদারিতে গত জানুয়ারি মাস থেকে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণা পর্যন্ত প্রধান গীতা ঘোড়ুই-সহ অন্য সদস্যরা পঞ্চায়েতে আসা প্রায় বন্ধই করে দেন।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলির টাকা সারা বছর ধরে খরচ করা গেলেও কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের বরাদ্দকৃত টাকা চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে খরচের নির্দেশ ছিল জেলা প্রশাসনের। সেই টাকা যথাযথ খরচ করলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা তো মিলবেই, পাশাপাশি পুরস্কারও (ইনসেনটিভ) জুটবে। প্রসঙ্গত, এই পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের প্রথম কিস্তির বরাদ্দ ২২ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ২ লক্ষ। নিয়মমতো বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ খরচের শংসাপত্র পাঠালে তবেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেলে। তহবিলে নাগরিক পরিষেবামূলক কাজকেই অগ্রাধিকার দিতে হয়। যেমন পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ, রাস্তা মেরামতি, গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে পঞ্চায়েতের তৈরি সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতি। অথচ এ ক্ষেত্রে টাকা খরচ না হওয়ায় স্থানীয় মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত যেমন হচ্ছেন, তেমনই বরাদ্দ টাকা যথাযথ খরচ না করায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে কি না সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উন্নয়ন ব্যাহত হওয়া নিয়ে আরামবাগে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বারই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থের জোগানের সমস্যা তুলে ধরেন। অথচ এখানে তাঁরই দল অন্তর্দ্বন্দ্বে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা খরচ করতে পারছে না। রাজ্যে উন্নয়নের হাল এর থেকেই বোঝা যায়।’’
পঞ্চায়েত প্রধান গীতা ঘোড়ুই বলেন, ‘‘পুরশুড়ার বিধায়ক মহম্মদ নুরুজ্জামানের হস্তক্ষেপে পঞ্চায়েত ক্রমশ কাজের মধ্যে ফিরছে। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা সংস্কার, পানীয় জলের ব্যবস্থা-সহ বেশ কিছু পরিকল্পনাও করা হয়েছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই টেন্ডার ডাকা হবে।’’ মহম্মদ নুরুজ্জামানের অবশ্য দাবি, “হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েতে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। পঞ্চায়েতে নিয়মিত উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকও শুরু হয়েছে।’’
পঞ্চায়েতের পূর্ব কৃষ্ণপুর, কুলহরাদিত্য, মজফ্ফরপুর, অরুণবেড়া, হরিণখোলা, আমডোবা প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে গোলমালে পঞ্চায়েত সদস্যদের অনেকেই আফিস আসছেন না। ১০০ দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনা, বিধবা-বার্ধক্য ভাতা সহ যাবতীয় ভাতা প্রকল্প থমকে গিয়েছে।। জাতীয় সহায়তা সহ সমস্ত সহায়তা প্রকল্পগুলির কাজও বন্ধ। এমনকী পানীয় জলের কল মেরামতির মতো ছোট কাজও হচ্ছে না। কোনও পরিষেবা না পেয়ে ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হচ্ছে না।
আরামবাগের যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ মজুমদার বলেন, “হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েতটিকে সচল করার চেষ্টা হচ্ছে। সম্প্রতি উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে কাজের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে”।