এমনই হাল ব্যস্ত মোড়ের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
মাত্র ১০০ ফুটের ফাঁক। তা ভরাট হল না দীর্ঘ ছ’বছরেও!
আর তার জেরে বছরের পর বছর বন্ধ রয়েছে দু’টি ব্যস্ত রাস্তার মোড়। বন্ধ হয়ে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বাসরুটও। খদ্দেরের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছেন রাস্তার দু’পাশের দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা। প্রতি বর্ষায় পাঁক আর কাদায় নাস্তানাবুদ হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।
ভূগর্ভস্থ পাঁচ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের দু’টি নিকাশি পাইপের মুখ গত ছ’বছরেও জোড়া না দিতে পারায় এই হাল হাওড়ার কদমতলার বেলিলিয়াস রোড ও নরসিংহ দত্ত রোডের মোড়ের। প্রশাসনিক ঢিলেমি কোন পর্যায়ে পৌঁছলে একটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এমন হাল হতে পারে, কার্যত তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে এই ঘটনা। যদিও নিকাশি পাইপ বসানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার (এইচআইটি) দাবি, আর কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর বক্তব্য, এইচ আই টি কোনও দিনই কাজ শেষ করতে পারবে না। অথচ পুরসভাকেও তারা কাজটা করতে দিচ্ছে না।
মেয়র বলেন, ‘‘আমি বীতশ্রদ্ধ। বারবার এইচআইটি-কে বলেছি হয় কাজ শেষ করুন, না পারলে আমাদের দিন। ওঁরা জেগে ঘুমিয়ে আছেন। নিজেরা পারছে না, কাউকে করতেও দিচ্ছে না।’’
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, ২০০৯-এ বাম সরকারের আমলে জেএনএনইউআরএম-এর টাকায় হাওড়ায় নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। মধ্য হাওড়ার বেলিলিয়াস রোড, পঞ্চাননতলা রোডের মতো নিচু এলাকায় জল জমার সমস্যা মেটাতে ফাঁসিতলা মোড় থেকে বেলিলিয়াস রোড ও নরসিংহ দত্ত রোড হয়ে আড়ুপাড়া সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ নিকাশি পাইপলাইন পাতার কাজ নেয় এইচআইটি। দু’টি রাস্তায় পাইপলাইন পাতার কাজ শেষ হওয়ার মুখে বেলিলিয়াস রোড ও নরসিংহ দত্ত রোডের মোড়ে এসে কাজ থমকে যায়। কারণ, মাটির নিচে ক্রমাগত বালির ধস।
এইচআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘পাইপ বসানোর সময়ে দেখা যায়, মাটি খুঁড়ে পাইপ বসাতে গেলেই বালির ধস নামছে। তাই ১০০ ফুটের পাইপলাইন না বসাতে পারায় কাজ শেষ করা যায়নি। তবে দু’এক মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।’’
কিন্তু ছ’বছরেও বালির ধস আটকানো গেল না কেন? এইচআইটি-র ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, এত দিন ডায়াফ্রাম ওয়াল করে পাইপ বসাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছিল, মাটি খুঁড়লে বালিতে গর্ত ভরে যাচ্ছে। পাইপ পাতা যাচ্ছে না। সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, এই কাজ করার আধুনিক প্রযুক্তি বা মেশিন পাঁচ বছর আগেও ছিল না। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার থেকে ১২ লক্ষ টাকা ভাড়ায় ‘ভাইব্রো হ্যামার’ নামে ওই মেশিন এনে কাজ করা হচ্ছে।
কিন্তু দীর্ঘ এত বছর ধরে ওই পাইপ জোড়া না দেওয়ায় নটবর পাল রোড ও বেলিলিয়াস রোড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ৫৭ ও ৬৩ নম্বর রুটের বাস চলাচল। ফলে যে রাস্তা দিয়ে সহজে ফাঁসিতলা মোড়ে পৌঁছনো যেত, এখন যেতে হচ্ছে পঞ্চাননতলা রোড দিয়ে ঘুরে। রাস্তা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন নরসিংহ দত্ত রোডের দু’পাশের দোকানদার, ব্যবসায়ী-সহ ব্যাঁটরা থানার পুলিশও। থানার সামনেই বছরের পর বছর পাইপ বসানোর কাজ চলায় সুষ্ঠু ভাবে থানা চালানোই দায় হয়ে উঠেছে পুলিশ প্রশাসনের।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এত বছর ধরে দু’টো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ থাকল কেন, তা-ই আমি বুঝতে পারছি না। কাজটা কেন এত দিনেও শেষ হয়নি, আমি এইচআইটি-র কাছে জানতে চাইব।’’