পুলিশ সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।
ভিড়ের প্রায় শেষ দিকে বসেছিল দশম শ্রেণির ছাত্র তীর্থরাজ কুমার।
কোনও মতে উঠে দাঁড়িয়ে সে বলল, ‘‘বই কিনতে পারছি না। আপনারা বই দিলে ভাল হয়।’’
সিআই (মগরা) ইন্দ্রজিৎ পালের আশ্বাস, ‘‘তোমার বইয়ের তালিকা দাও। আমরা চেষ্টা করব দেওয়ার।’’
গ্রামবাসী বিমল প্রামাণিকের পুকুর থেকে প্রায়ই মাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাঁর কাতর আবেদন, ‘‘পুকুরে পাহারার বন্দোবস্ত করলে ভাল হয়।’’
এ বার উত্তর দিলেন মগরা থানার ওসি সুখময় চক্রবর্তী, ‘‘আপনারা সহযোগিতা করলেই হবে। প্রয়োজনে গ্রামে আর জি পার্টি করা যেতে পারে। এ নিয়ে পরে বৈঠক ডাকব।’’
হাততালির ঝড় উঠল।
মগরা থানা এলাকার দিগসুই-হোয়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন প্রত্যন্ত গ্রাম বাগরী দক্ষিণ পাড়ায় রবিবার ‘পুলিশি সহায়তা শিবির’ এ ভাবেই জমে উঠেছিল। পুলিশ আধিকারিকদের সামনে বেহাল রাস্তা থেকে নানা সমস্যা এবং অভাব অভিযোগ জানালেন বহু গ্রামবাসীরা। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে থানা হওয়ায় যাঁদের অনেকেই সে রাস্তায় যান না।
বিভিন্ন জেলার সঙ্গে হুগলিতেও এ ভাবে গ্রামে গিয়ে শিবিরের আয়োজন আগেই শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। এ দিন মগরার ওই গ্রামে শিবিরটি হয় সঙ্ঘশ্রী ক্লাবে। উপস্থিত ছিলেন সিআই, ওসি এবং থানার অন্য পুলিশ আধিকারিকেরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ঘণ্টা দুয়েক শিবির হয়। প্রায় আাইশো গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। জমা পড়ে মোট ৫৫টি অভিযোগ। এ দিন শুধু প্রতিকারের আশ্বাস দেওয়াই নয়, পুলিশ আধিকারিকেরা নিজেদের এবং থানায় ফোন নম্বরও গ্রামবাসীদের দেন। যাতে প্রয়োজনে তাঁরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ বার থেকে প্রতি রবিবার ওই গ্রামে থানার এক জন অফিসার গিয়ে মানুষের সমস্যা ও অভাব-অভিযোগ শুনবেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘জনসংযোগ বাড়ানোর জন্যই এমন উদ্যোগ। এতে গ্রামবাসীদের সাড়া মিলছে। এমন শিবির আরও নানা গ্রামে হবে।’’
এ দিন যে শিবির হবে, তা ওই ক্লাবের পক্ষ থেকেই ক’দিন ধরে গ্রামে প্রচার করা হচ্ছিল। শিবিরে উপস্থিত গ্রামবাসীদের কেউ বললেন বেহাল রাস্তার কথা, কেউ আবার প্রকাশ করলেন বিপিএল কার্ডে নাম না থাকার ক্ষোভ। পুলিশ আধিকারিকেরা সব শুনে সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়ে প্রতিকারের আশ্বাস দিলেন। ওই ক্লাবের সম্পাদক সমর কর্মকার বলেন, ‘‘এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পুলিশ পাশে থাকলে প্রয়োজনে আমরা রাত পাহারারও ব্যবস্থা করব।’’
পুলিশের সামনে নানা সমস্যা তুলে ধরতে পেরে গ্রামবাসীরা খুশি। এমনটা তাঁরা আগে দেখেননি।