উদয়নারায়ণপুর

বন্যায় গ্রামীণ পরিবহণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা

বন্যার জলে ভেঙে গিয়েছে গ্রামীণ রাস্তা থেকে রাজ্য সড়ক। উদয়নারায়ণপুর, আমতা-১ সহ-হাওড়া জেলার জলমগ্ন ব্লকগুলির বিভিন্ন রাস্তার অস্তিত্বই মুছে গিয়েছে।

Advertisement

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০২:০০
Share:

বন্যার জলে ভেঙে গিয়েছে গ্রামীণ রাস্তা থেকে রাজ্য সড়ক। উদয়নারায়ণপুর, আমতা-১ সহ-হাওড়া জেলার জলমগ্ন ব্লকগুলির বিভিন্ন রাস্তার অস্তিত্বই মুছে গিয়েছে। আইএসজিপি এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে তৈরি বহু রাস্তা এখনও জলের তলায়। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের আশঙ্কা, জল জমে বেশিরভাগ রাস্তাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বন্যার জল সরে যাওয়ার পর ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে। যার ফলে ব্যাহত হতে পারে হাওড়ার গ্রামীণ পরিবহণ।

Advertisement

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। বৃহস্পতিবার ডোমজুড় বিডিও অফিসে এক বৈঠকে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বেহাল রাস্তার তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুক্রবার হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলি দ্রুত মেরামতির জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ত (সড়ক) দফতর, জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতির অধীন যে রাস্তাগুলি পুরোপুরি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলির তালিকা তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে।’’ শুক্রবার রাজ্য সরকারের কাছে ওই তালিকা জমা দেওয়ার কথা বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষার নাগাড়ে বৃষ্টির পরে প্রতি বছরই জল ছাড়ে ডিভিসি। সেই জলে প্লাবিত হয় উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের একাধিক গ্রাম। এই ছবি জেলা প্রশাসনের কাছে পরিচিত। কারণ এই এলাকাগুলির বেশিরভাগই দামোদর নদের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এই দিকটি হল দামোদরের ‘স্পিল’ এলাকা। অর্থাৎ কোনও বাঁধ নেই। তাই ডিভিসির ছাড়া জল এই এলাকাকে প্লাবিত করে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এ বছর একই সঙ্গেই প্লাবিত হয়েছে দামোদরের পূর্ব দিক। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং হুগলির জাঙ্গিপাড়ার কাছে ডাকাতিয়া খালের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় উদয়নারায়ণপুরের হরিশপুর ও খিলা পঞ্চায়েতের অনেক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও জলের তলায় চলে গিয়েছে আমতা ১ ব্লকের কানপুর, বসন্তপুর, বালিচক, রসপুর, খোসালপুর, জগৎবল্লভপুর ব্লকের জগৎবল্লভপুর ১, শঙ্করহাটি ২, গোবিন্দপুর, ডোমজুড়ের উত্তর ঝাঁপড়দহ, পার্বতীপুর, সাঁকরাইলের মাণিকপুর, পাঁচপাড়া, সারেঙ্গা-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত। এই এলাকাগুলিতে এখনও জল জমে রয়েছে। ভেঙে গিয়েছে অধিকাংশ রাস্তা। পিচ উঠে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে ইটের খোয়া, মাটি। উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘বন্যার পরে রাস্তাগুলির যে হাল, তাতে প্রতিটি রাস্তাই মেরামতির জন্য জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছি।’’

Advertisement

গ্রামের রাস্তা তো বটেই, ক্ষতি হয়েছে রাজ্য সড়কের। আমতার বসন্তপুরে রাজাপুর-মুন্সিরহাট রোডের অনেক অংশ এখনও জলের তলায়। ওই এলাকার আলতারা গ্রামের সামনে দেখা গিয়েছে, রাস্তার উপরে এক হাঁটু জল জমে রয়েছে। প্রায় পুরো রাস্তাটাই ভেঙে গিয়েছে। ডোমজুড় ব্লকের রাজাপুর, নোনাকুণ্ডু, জগৎবল্লভপুরের পাতিহাল, বড়গাছিয়া এলাকাতেও একই অবস্থা। রাজাপুর সেচ খালের বাঁধের একাংশ ভেঙে ওই এলাকাগুলির রাস্তায় জল জল জমে রয়েছে। জেলার পূর্ত (সড়ক) দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, জল সরলেও মেরামতির কাজ না হলে এই রাস্তাগুলির উপরে যান চলাচল কার্যত অসম্ভব।

জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যের আশ্বাস, বন্যার আগেই জেলায় মোট ৬০টি রাস্তা তৈরি এবং মেরামতির টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আচমকা বন্যা এসে যাওয়ায় ঠিকেদারদের কাজ শুরু করতে বারণ করা হয়েছিল। জল পুরোপুরি নেমে গেলেই তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশন এবং ত্রয়োদশ কেন্দ্র অর্থ কমিশনের টাকায় রাস্তা সারাইয়ের কাজ হবে। (বন্যায় রাস্তার হাল)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন