হাওড়ায় যাত্রীর মাথায় ভাঙল বিম 

রেল সূত্রের খবর, ছাদের উপর দিয়ে যাওয়া জলের পাইপে ফুটো হয়ে গিয়ে জল পড়ায় দেওয়ালে নোনা ধরে গিয়েছিল। যার জেরে মরচে ধরে গিয়েছিল কোল্যাপসিবল গেটের উপরে লাগানো লোহার বিমেও। সেই বিমই এ দিন ভেঙে পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০৩:২৩
Share:

অঘটন: আহত যাত্রী বাসুরা বেগম। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

মরচে ধরা লোহার বিম ভেঙে পড়ল ট্রেন ধরতে আসা এক অসুস্থ মহিলার মাথার উপরে। সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে।

Advertisement

রক্ষণাবেক্ষণের কাজে রেলের গাফিলতিকেই ফের বেআব্রু করে দিয়েছে এই দুর্ঘটনা। প্রশ্ন উঠেছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে স্টেশনের সৌন্দর্যায়ন করা হচ্ছে, অথচ যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের এই চরম দুরবস্থা কেন? রেলের বাজেটে উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। অথচ, মরচে ধরা লোহার বিম মাথায় পড়ে আহত হচ্ছেন যাত্রী।

রেল সূত্রের খবর, ছাদের উপর দিয়ে যাওয়া জলের পাইপে ফুটো হয়ে গিয়ে জল পড়ায় দেওয়ালে নোনা ধরে গিয়েছিল। যার জেরে মরচে ধরে গিয়েছিল কোল্যাপসিবল গেটের উপরে লাগানো লোহার বিমেও। সেই বিমই এ দিন ভেঙে পড়ে।

Advertisement

এই ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, স্টেশন কর্তৃপক্ষ এত দিন কী করছিলেন? বিপজ্জনক জেনেও বিমটি পাল্টানো হয়নি কেন? আরও বড় কোনও অঘটনও তো ঘটে যেতে পারত। অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনার পরেও রেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেননি।

হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের এই অংশ থেকে (উপরে চিহ্নিত) বিম ভেঙে পড়ে।

রেলের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, এ দিন ঘটনার খবর পেয়েই চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তদন্তের রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অসুস্থ মাকে উলুবেড়িয়ার এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে আরামবাগ থেকে ট্রেনে হাওড়ায় আসেন শাহ বাপি চাঁদ। পেশায় নির্মাণকর্মী চাঁদ হাওড়া স্টেশন থেকে উলুবেড়িয়ার ট্রেন ধরার জন্য মা বাসুরা বেগমকে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে বলে নিজে টিকিট কাটতে যান। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময়েই লোহার বিমটি বাসুরা বেগমের মাথায় সজোরে ভেঙে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের গেটের সামনে লুটিয়ে পড়েন মহিলা।

এই দৃশ্য দেখে স্টেশনের অন্য যাত্রীরা ছুটে আসেন। চলে আসেন পূর্ব রেলের পদস্থ অফিসারেরাও। স্টেশনের মাইকে ঘোষণা করা হয় মহিলার ছেলের নাম। তা শুনেই তিনি ছুটে আসেন। এর পরে রেলের লোকজন একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে ওই মহিলাকে চিকিৎসার জন্য হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহত মহিলার ছেলে বলেন, “মাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া রেল প্রথমে আর কোনও সাহায্য করেনি। আমাকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হয়েছে।’’ হাওড়া জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। সিটি স্ক্যানও করা হয়েছে।

ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেন রেল কর্তৃপক্ষ। বিকেলে রেলের আধিকারিকেরা হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে আহত মহিলাকে ছাড়িয়ে রেলের বি আর সিংহ হাসপাতালে ভর্তি করান। এই প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, ‘‘রেলই ওই মহিলাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে বি আর সিংহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরোটাই রেল দেখছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন