প্রাণ ওষ্ঠাগত গরমে শুধু প্রশ্ন আজ কত ডিগ্রি

‘‘সকাল ৯টা। দোকান খোলার সময় থেকেই চড়চড়ে রোদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই রোদকে গায়ে ঠেকানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গরম হাওয়ায় চোখ-মুখ জ্বলছে। তার উপর এসি নেই। দোকানের ভিতরেও অবস্থা কাহিল। এই অবস্থায় খদ্দের আসে?’’ গরমে ব্যবসা কেমন জানতে চাইতেই ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলেন দোকানদার।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম l

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৬
Share:

-গরম থেকে বা‌ঁচতে চোখে-মুখে জল দিচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। —বাগনানে নিজস্ব চিত্র।

‘‘সকাল ৯টা। দোকান খোলার সময় থেকেই চড়চড়ে রোদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই রোদকে গায়ে ঠেকানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গরম হাওয়ায় চোখ-মুখ জ্বলছে। তার উপর এসি নেই। দোকানের ভিতরেও অবস্থা কাহিল। এই অবস্থায় খদ্দের আসে?’’ গরমে ব্যবসা কেমন জানতে চাইতেই ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলেন দোকানদার।

Advertisement

উলুবেড়িয়া ওটি রোডের ধারে জামাকাপড়ের মাঝারি মাপের দোকানের ওই মালিক আরও জানালেন, ‘‘রোদের তাপ আর গরম নামতে নামতে সন্ধে কাবার। রাত ৯টায় দোকান বন্ধ করতে হয়। ওই টুকু সময়ে কী বিক্রিবাটা হবে বলতে পারেন?’’ গত এক সপ্তাহ ধরে যে ভাবে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশপাশকে পছন্দ করে ফেলেছে তাতে দোকানমালিকের কথাকে মূল্য দিতেই হয়। শুধু ওই কাপড়ের দোকানের মালিকই নন, সব ধরনের দোকানের পরিস্থিতিই এক। এমনকী দোকানে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে এমন এক কাপড় ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘তেতেপোড়া দুপুরে কে বেরোবে বলুন তো! যা অবস্থা তাতে দোকান খুলে রাখার খরচটুকুও তুলতে পারছি না। ব্যবসা তো দূরের কথা।’’

বেলা ১১টার পর থেকেই খাঁ খাঁ করছে রাস্তা। বাস, অটো-ট্রেকারেও নামমাত্র যাত্রী। সাইকেল রিকশার স্ট্যান্ডে রিকশা থাকলেও বেশিরভাগ চালকই নেই। যে দু’একজন মাথায় ভিজে গামছা জড়িয়ে বসে, কাছের কোনও গন্তব্য ছাড়া তাঁদের যেতে অনীহা। একই ছবি অটোস্ট্যান্ডেও। যাত্রীর আশায় বসে থাকলেও তেমন যাত্রী না পেয়ে অনেকেই অটোয় দিবানিদ্রায়। এক অটোচালকের কথায়, ‘‘প্রচণ্ড গরমের জন্য সরকার স্কুল-কলেজে ছুটি করে দিয়েছে। রাস্তায় প্যাসেঞ্জার না থাকলে আমাদের চলবে কী করে?’’ আরও জানান, রুটে অটোর সংখ্যা প্রচুর। সন্ধের পর অনেক অটো নামছে। ফলে অল্প সময়ে অনেক অটো হয়ে যাওয়ায় লাভও হচ্ছে না।

Advertisement

তবে গরমে ‘সেদ্ধ’ হলেও হাসি ফুটেছে বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকানে। পাখার দোকান থেকে টিভি, ফ্রিজ, এসি মেশিনের দোকানে ভিড় ক্রেতাদের। বাগনানের এক পাখা বিক্রেতা জানান, গত এক সপ্তাহে তিনশোর মতো পাখা বিক্রি হয়েছে। প্রায় একই সুর এসি মেশিন বিক্রেতাদেরও। বেড়েছে রোদচশমা আর ছাতার বিক্রি।

তবে প্রখর রোদের হাত থেকে বাঁচতে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পরনে হালকা রঙের সুতির পোশাকের পাশপাশি, রাস্তায় বেরোলে অবশ্যই ছাতা সঙ্গে রাখার কথা বলছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে রাস্তায় কাটা ফল, এখানে সেখানে জল না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ রঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘প্রচণ্ড রোদের মধ্যে না বেরোনোই ভাল। তা সত্ত্বেও বেরোতে হলে শরীর ঢাকা পোশাক পরে বেরোতে হবে। রোদ চশমা ও ছাতা অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। দিনে কমপক্ষে চার লিটার জল খেতে হবে। সঙ্গে ওআরএস থাকলে ভাল। রান্নায় খুব কম পরিমাণে তেল মশলা দিতে হবে। শশা, পেঁপে, তরমুজ, ফুটি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন