মারমুখী হামলাকারীদের দেখে ছোটাছুটি প্রসূতিদেরও

চন্দননগর হাসপাতালে তুলকালাম

প্রসূতি বিভাগে ভাঙচুর চালায় একদল লোক। অন্য এক প্রসূতির দাদা বাধা দিতে গিয়ে প্রহৃত হন। আতঙ্ক ছড়ায় ওই বিভাগে ভর্তি প্রসূতিদের মধ্যে। তাঁরা ছোটাছুটি শুরু করে দেন। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

আতঙ্ক: ভেঙে দেওয়া হয়েছে প্রসূতি বিভাগের মূল দরজা। সদ্যোজাতকে নিয়ে প্রাণপণে বেরিয়ে আসছেন এক মহিলা। নিজস্ব চিত্র

মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন এক প্রসূতি। কিন্তু এতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে রবিবার সকালে ধুন্ধুমার হল চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে। প্রসূতি বিভাগে ভাঙচুর চালায় একদল লোক। অন্য এক প্রসূতির দাদা বাধা দিতে গিয়ে প্রহৃত হন। আতঙ্ক ছড়ায় ওই বিভাগে ভর্তি প্রসূতিদের মধ্যে। তাঁরা ছোটাছুটি শুরু করে দেন। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। কিন্তু এই ঘটনায় বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল হাসপাতালের নিরাপত্তা।

Advertisement

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দননগরের কাঁটাপুকুর এলাকার বাসিন্দা বিজয় দাসের স্ত্রী শিল্পা গর্ভবতী ছিলেন। শনিবার হাসপাতালেই নানা রকম পরীক্ষার পরে তিনি বাড়ি ফিরে যান। রবিবার ভোরে প্রসব বেদনা ওঠায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়। তার কিছুক্ষণ পরে শিল্পা মৃত সন্তান প্রসব করেন। সেই খবর পেয়ে শিল্পার পরিবারের সদস্যেরা সেখানে হাজির হন। জড়ো হয়ে যান আরও কিছু লোকজনও। এর পরেই শিল্পার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। কিছু লোকজন দোতলায় প্রসূতি বিভাগের সামনে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেন। তার পরেই পরিস্থিতি জটিল হয়।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মারমুখী কয়েকজন প্রসূতি বিভাগে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু কাচের দরজা বন্ধ ছিল। বিক্ষোভকারীরা সেই দরজা ভেঙে দেয়। সেই সময়ে ওই বিভাগের সামনের বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন চাঁপদানির এক প্রসূতির দাদা আনন্দ শ্রীবাস্তব। তিনি প্রতিবাদ জানানোয় হামলাকারীরা তাঁকে মারধর করে। ও দিকে, ওয়ার্ডের ভিতরে প্রসূতি এবং তাঁদের আত্মীয়েরা আতঙ্কে প্রথমে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরাই হামলাকারীদের বুঝিয়ে ঠান্ডা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের খবর দেন। পুলিশ আসতে দেখে হামলাকারীরা চম্পট দেয়।

Advertisement

আক্রান্ত আনন্দবাবু বলেন, ‘‘কী হল বুঝলাম না। এ ভাবে কেউ প্রসূতি বিভাগে হামলা করে? ওরা আমার কোনও বারণ শুনল না। হাসপাতাল তো সকলের। আরও বড় কিছু ঘটে যেতে পারত। হাসপাতালের কোনও নিরাপত্তাও ছিল না।’’ হাসপাতালের সুপার জগন্নাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। ওই প্রসূতি মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের কোনও গাফিলতি ছিল না। তবু ভাঙচুর চালানো হল। হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’

আতঙ্ক-চিত্র


ভোর ৩টে: ভর্তি হলেন শিল্পা।

সাড়ে ৩টে: মৃত সন্তান প্রসব।

৬টা: লোকজন জড়ো হল হাসপাতালে।

৭টা: বিক্ষোভ শুরু।

সাড়ে ৭টা: প্রসূতি বিভাগে বিক্ষোভ।

৭টা ৪০: এল পুলিশ।

পক্ষান্তরে, হামলাকারীদের তিনি চেনেন না বলে দাবি করেছেন শিল্পার স্বামী বিজয়। তাঁর দাবি, ‘‘শনিবার স্ত্রীকে পরীক্ষার পর হাসপাতাল জানিয়েছিল, ওঁর গর্ভস্থ সন্তান সুস্থ রয়েছে। কিন্তু রবিবার কী করে স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করল, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আমাদের কেউ হামলা করেনি। হামলাকারীরা আমাদের পরিবারের কেউ নয়। বহিরাগত।’’ কিন্তু চিকিৎসায় গাফিলতি কোনও অভিযোগও কোথাও দায়ের করেননি বিজয়বাবু।

গোটা ঘটনার পরে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রসূতিদের আত্মীয়দের অনেকেই মনে করছেন, হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না-থাকার জন্যই হামলাকারীরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারল। হাসাপাতালেই পুলিশ-চৌকি থাকলে হয়তো এ দিনের ঘটনা এড়ানো যেত। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারত।

হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবের কথা মেনে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে শুধু কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা। সুপার জানান, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। আপাতত এ দিনের হামলার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হবে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই প্রসূতির পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন