৬০ বছর পেরোলেও বদলায়নি ট্রেনের দেরি

তিমিরেই শেওড়াফুলি

উত্তরপাড়ার ভদ্রকালীর বাসিন্দা দেবব্রত মল্লিকও রাতের ট্রেনের সওয়ারি। তাঁর কথায়, ‘‘মঙ্গলবার স্টেশনে পৌঁছে দেখি ভিড়ে ঠাসা। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তারকেশ্বর লোকাল ছাড়ে। উত্তরপাড়া স্টেশনে পৌঁছে না পেলাম ওষুধ, না রুটি। এটাই এখন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
Share:

জবরদখলে স্টেশন চত্বর। ছবি: প্রকাশ পাল

হিন্দমোটরের বাসিন্দা বিজন দাস রাতের ট্রেনে বাড়ি ফেরেন। মঙ্গলবার তাঁর কিছুটা দেরিই হয়েছিল অফিস থেকে বেরোতে। ১০টা ২৮-এ হাওড়া স্টেশনে এসে তিনি থ! ১০টা ৫ মিনিটের তারকেশ্বর লোকাল তখনও ছাড়েনি!

Advertisement

উত্তরপাড়ার ভদ্রকালীর বাসিন্দা দেবব্রত মল্লিকও রাতের ট্রেনের সওয়ারি। তাঁর কথায়, ‘‘মঙ্গলবার স্টেশনে পৌঁছে দেখি ভিড়ে ঠাসা। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তারকেশ্বর লোকাল ছাড়ে। উত্তরপাড়া স্টেশনে পৌঁছে না পেলাম ওষুধ, না রুটি। এটাই এখন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

মঙ্গলবারই পূর্ব রেলের হাওড়া-শেওড়াফুলি স্টেশনের মধ্যে প্রথম ইএমইউ লোকাল চলার ৬০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠান হয়েছে। পূর্ব রেলের কর্তারা মহিলা কামরায় সিসিটিভি লাগানো, ট্রেন নিয়মিত চলা-সহ একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ওই রাতেই দেখা গেল, অবস্থা তিমিরেই।

Advertisement

ছয় দশক আগে গতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে চালু হয়েছিল ইএমইউ। গতি বাড়লে সময় বাঁচবে, এই ছিল আশা। কিন্তু এত বছর পরও কি সেই ছবি একটুও বদলছে? ট্রেনটাই যদি সময়ে না ছাড়ে তা হলে যাত্রী পরিষেবা আর কীসের? সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে ট্রেনের সংখ্যা। কিন্তু সেই ট্রেন যদি না ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছয়, তা হলে সমস্যা আর কোথায় মিটল? এই প্রশ্নে ক্ষোভের অন্ত নেই নিত্যযাত্রীদের।

এত বছরে আদৌ কি বদলছে শেওড়াফুলি স্টেশনে অবস্থা?

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনের দু’দিকে তিনটি ওভারব্রিজ হয়েছে। এর মধ্যে ডাউন লাইনের দিকের ওভারব্রিজটি ৩-৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত নয়। সাধারণত ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আপ ট্রেন ঢোকে। মাঝেমধ্যে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মেও আপ ট্রেন ঢোকানো হয়। সে ক্ষেত্রে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের অপেক্ষমান বহু যাত্রী রেললাইন টপকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওঠেন। ওই ওভারব্রিজ ৩-৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করা অথবা ওই জায়গায় একটি সাবওয়ে তৈরি নিত্যযাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি। ৩-৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেড বহু পুরনো। ওই প্ল্যাটফর্মের বড় অংশই ছাউনিহীন। ফলে, রোদবৃষ্টিতে সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের।

অপরিষ্কার প্ল্যাটফর্ম নিয়েও ক্ষোভ যাত্রীদের। স্টেশনের পাশেই শেওড়াফুলি হাট। দিনভর হাটের লোকজন বিভিন্ন জিনিস নিয়ে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামা করেন। ঝাঁকা-ঝুড়িতে প্ল্যাটফর্ম ভরে থাকে। তাতে প্ল্যাটফর্ম আরও নোংরা হয়। কিন্তু পরিষ্কারের দিকে রেল কর্তৃপক্ষের তেমন নজর নেই। ৩-৪ নম্বর প্ল্যটফর্মে মহিলা এবং পুরুষদের সুলভ শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের গণ-শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন। মহিলাদের জন্য প্ল্যাটফর্মে একটিমাত্র শৌচাগার রয়েছে। সেটির অবস্থাও দুর্বিসহ। শুধু তাই নয়, শৌচাগারের জলের সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা ন‌েই। সেই জল রেললাইনে পড়ে।

নিত্যযাত্রীদের সংগঠন ‘শেওড়াফুলি রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে ওই স্টেশনের পরিকাঠামো এবং যাত্রী পরিষেবার উন্নয়ন নিয়ে এক সময় আন্দোলন হয়েছে। বর্তমানে অবশ্য সংগঠনটির অস্তিত্ব নেই। সংগঠনের প্রাক্তন যুগ্ম সম্পাদক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রী পরিষেবা সত্যিই উপেক্ষিত। ফের রেলকর্তাদের কাছে শেওড়াফুলি স্টেশনের উন্নয়নের দাবি জানাব আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন