একদিকে রবীন, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ।
এ রাজ্যে পালাবদলের সলতে পাকানো দেখিয়েছিল সিঙ্গুর। এবার সেই সিঙ্গুর থেকেই রাজ্যের শাসকদলকে হটাতে ময়দানে হাজির সিপিএম। সিঙ্গুর নিয়ে রাজ্য বাম নেতৃত্ব যে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে তা বোঝাতেই ‘ভোট মেশিনারি’-তে দক্ষ রবীন দেবকে কলকাতা থেকে এনে প্রার্থী করেছে সিপিএম। রবীনবাবুর সঙ্গে আগের নির্বাচনে জিতে আসা তৃণমূলের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ দত্তের দ্বৈরথ-ই এখন সিঙ্গুরবাসীর অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
কলকাতা ছেড়ে কেন সিঙ্গুর?
সেই প্রশ্নে রবীনবাবুর পাল্টা যুক্তি,“আমি সিঙ্গুরে আদৌ নতুন নই। গত লোকসভা এবং পঞ্চায়েতে আমি সিঙ্গুরে সংগঠনের দায়িত্ব ছিলাম। দলের অনুগত কর্মী হিসেবে আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালান করব।”
কিন্তু বাম আমলেই তো সিঙ্গুর ছেড়ে টাটারা চলে গিয়েছিল। তাই এই রাজ্যে টাটাদের ধরে রাখতে না পারার দায় তো বামেদেরও রয়েছে?
রবীনবাবুর সাফ জবাব, “গত পাঁচ বছরে শিল্পকে তলানিতে নামিয়ে এনেছে তৃণমূল। তরুণেরা চাকরি না পেয়ে হতাশ। সিঙ্গুরকে যে দল শ্মশানে পরিণত করল, তার স্বরূপটাই মানুষের কাছে তুলে ধরব।”
বস্তুত সিঙ্গুর নিয়ে এই রাজ্যের শাসকেরা এখন কিছুটা ব্যাকফুটে। তারপর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত পিছু নিয়েছে গোষ্ঠীবিবাদ। রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিসংখ্যান দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বনাম কৃষিপ্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার বিবাদের জেরে ইতিমধ্যেই সিঙ্গুরে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সিঙ্গুর থানার সামনে পথ অবরোধও করেছে। মাস্টারমশাই (রবীন্দ্রনাথবাবু) শিবিরও পাল্টা মিছিল করেছে। পরে অবশ্য বিষয়টি মাস্টারমশাইয়ের কানে পৌঁছতেই তিনি মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দেন। দলীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পুরো বিষয়টি দলকে জানাতে মাস্টারমশাই তৃণমূল ভবনে গিয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিরই ফয়দা তুলতে মাঠে নেমেছে সিপিএম। সেই কারণেই রবীনবাবুকে সিঙ্গুরে এনে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে শিল্পবিরোধী তকমাকে জোরদার প্রচারে কাজে লাগাতে চাইছে তারা। এলাকার কোনও নেতাকে প্রার্থী না করে রবীনবাবুকে সিঙ্গুরের আনার পিছনে অবশ্য সিপিএমের আর একটি কৌশলও কাজ করছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তাঁদের মতে সিঙ্গুরের কোনও নেতাকে প্রার্থী করলে এলাকার মানুষ তাঁকে ভালভাবে না-ও নিতে পারেন। তাই তাদের বাদ দিয়েই সিঙ্গুরে রবীন দেবের মত পোড় খাওয়া নেতাকে বাইরে থেকে আনা হয়েছে।
জেলার সিপিএম নেতারা অবশ্য এই কথা মানতে চাইছেন না। জেলা সম্পাদক সুর্দশন রায়চৌধুরীর ব্যাখ্যা, “এটা কোনও চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। আমরা মনে করি সিঙ্গুর যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তাতে এখানে এমন একজন প্রার্থী দেওয়া উচিত, যাতে মানুষ বোঝেন বামফ্রন্ট সিঙ্গুরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। এই কারণেই রবীনবাবুর মতো নেতাকে এখানে প্রার্থী করা হয়েছে।”
সোমবার রবীনবাবুর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সিঙ্গুরে মাঠে নেমে পড়েছেন সিপিএম কর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুরে সিঙ্গুরের বেড়াবেড়িতে দেওয়াল লিখছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চার দশকের বেশি সময়ের পার্টি-সদস্য শঙ্কর সিংহ। জোনাল কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য শঙ্করবাবু বলেন,“১৯৭৭ সাল থেকে দেওয়াল লিখছি। প্রথম কয়েকটা দেওয়াল লিখতে একটু হাত কাঁপে। কিন্তু রবীনবাবু প্রার্থী হওয়ায় আমরা খুশি।” দলীয় সূত্রের খবর, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রবীনবাবু এলাকায় প্রচারে নামছেন। ওইদিনই কর্মীসভা দিয়ে তিনি প্রচার শুরু করবেন।