জানালেন গড়বাড়চুমুকে আক্রান্ত এসআই

হঠাৎ হানাতেই বিভ্রান্ত হয় সবাই

চার দিনেও জ্ঞান না-ফেরায় শ্যামপুরের ওসি প্রহৃত সুমন দাসকে বুধবার মল্লিকবাজারের একটি স্নায়ুরোগ চিকিৎসার বেসরকারি হাসপাতালে সরানো হয়। সেখানেই শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। সাত দিন আগে শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুকে সুমনবাবুর সঙ্গেই প্রহৃত হয়েছিলেন সাব-ইনস্পেক্টর তরুণ পুরকায়স্থও। তিনি উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকটাই বিপন্মুক্ত। সে দিন কী হয়েছিল, জানালেন আনন্দবাজারকে।তরুণবাবু বলেন, ‘‘মতিয়ারের বাহিনীর আচমকা হানাতেই আমরা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। ওরা প্রথমে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেয়।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৫
Share:

আহত: শ্যামপুরের এসআই।ফাইল চিত্র

তাঁর কপালে সাতটি সেলাই পড়েছে। বাঁ কাঁধের হাড় সরে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে যন্ত্রণা কমেছে। কথা বলছেন। গত ৫ জানুয়ারি বাড়চুমুক গ্রামে হঠাৎ হামলায় তাঁরা সকলেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ায় কাউকে যে প্রতিহত করতে পারেননি, তা মেনে নিলেন শ্যামপুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর তরুণ পুরকায়স্থ। তবে, অভিযানের প্রস্তুতিতে যে ফাঁক ছিল না, শুক্রবার এই দাবিও করেন তিনি।

Advertisement

তরুণবাবু বলেন, ‘‘মতিয়ারের বাহিনীর আচমকা হানাতেই আমরা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। ওরা প্রথমে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেয়। আমাকে বাঁশ দিয়ে মারে। অত লোক! আমরা দু’জন। কী করব! সঙ্গে তিন আসামি থাকায় আরও সমস্যা হয়।’’

একটি ওয়াকফ সম্পত্তি কারা দেখভাল করবে, তা নিয়ে ওই গ্রামের মতিয়র রহমান মুন্সির সঙ্গে তার আত্মীয় হানিফ মুন্সির বিবাদ দীর্ঘদিনের। ৫ জানুয়ারি সকালে মতিয়রের লোকজন হানিফের বাড়িতে হামলা চালায়, মারধর এবং মহিলাদের শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। মতিয়র-সহ অভিযুক্ত ২০ জনকে ধরতে সে দিন গভীর রাতে ওসি সুমন দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালায় পুলিশ। কেমন ছিল সে প্রস্তুতি?

Advertisement

তরুণবাবু জানান, তখন রাত প্রায় ২টো। একটি প্রিজন ভ্যান-সহ পাঁচটি গাড়ি নিয়ে তাঁরা ঢুকেছিলেন। প্রথম গাড়িতে তিনি, ওসি, পিসি পার্টির প্রধান সুবর্ণ পতি-সহ দু’জন এবং জনাতিনেক সিভিক ভলান্টিয়ার। বাকি গাড়িগুলিতে ছিল র‍্যাফ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার। সব মিলিয়ে জনাচল্লিশ। মুন্সিপাড়ায় মতিয়রের বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে পুলিশের গাড়িগুলি থামে।

এরপর?

এসআই জানান, প্রথমে তাঁদের গাড়ির ছ’জনকে নিয়ে মুন্সিপাড়ার দিকে এগোন ওসি। বাকি গাড়িগুলির র‍্যাফ এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা থেকে যান সেখানেই। মতিয়রের বাড়ির কাছ থেকেই তাঁরা তিন অভিযুক্তকে ধরেন। তরুণবাবু এক অভিযুক্তকে ধরে রেখেছিলেন, ওসি দু’জনকে। ধীরে হাঁটছিলেন তাঁরা। নিময়মতো পিছনে দলের অন্যদের থাকার কথা থাকলেও সে দিন তা ছিল না। সুমনবাবু এবং তরুণবাবুর পিছনে ছিলেন মাত্র এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার। বাকিরা সামনে। তখনই পিছনে মতিয়রের বাড়ি থেকে তাঁদের তাড়া করা হয়। হামলাকারীরা সংখ্যায় অন্তত ৩০ জন ছিল। তাদের হাতে ছিল বাঁশ, লাঠি, রড। এতেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন তরুণবাবুরা। মার খেয়ে পড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান হারান তরুণবাবু। পরের ঘটনা তাঁর আর কিছুই জানা নেই।

কিন্তু তাঁরা প্রতিহত করার চেষ্টা করলেন না কেন? তরুণবাবু এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। কেনই বা বাহিনীর বাকিদের দাঁড় করিয়ে রেখে ছ’জনকে নিয়ে ওসি মুন্সিপাড়ায় ঢুকলেন, এ প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি। তবে, ঘনিষ্ঠ মহলে তরুণবাবু জানিয়েছেন, অভিযানে সমন্বয়ের অভাব ছিল।

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ কর্তারা জানান, তরুণবাবুর কাছে সে দিন আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। ওসির কাছে থাকলেও তিনি ব্যবহারের সুযোগ পাননি। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র ছিল সুবর্ণবাবুর কাছে। মারধরের সময় সুবর্ণবাবুই শূন্যে দু’বার গুলি চালান বলে তাঁদের অনুমান। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওসি গুরুতর অসুস্থ। তিনি সুস্থ না হওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। তবে পুলিশকে যে ভাবে মারা হয়েছে তাতে দোষীরা কেউ পার পাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন