খেলতে খেলতে পড়া, নয়া পদ্ধতি উলুবেড়িয়ার স্কুলে

দেওয়ালের গায়ে সুসজ্জিত কাঠের বোর্ড। বোর্ডে চারটি সারিতে সাজানো বাঁশি, চামচ, মাছ এবং ১ থেকে ৮ পর্যন্ত সংখ্যা। বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষক। তাঁকে ঘিরে একদল কচিকাঁচা। বাঁশি, চামচ, মাছ এবং সংখ্যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের চলছে অঙ্ক শেখানোর কাজ।

Advertisement

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০৩
Share:

বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষক, কচিকাঁচা। — নিজস্ব চিত্র।

দেওয়ালের গায়ে সুসজ্জিত কাঠের বোর্ড।

Advertisement

বোর্ডে চারটি সারিতে সাজানো বাঁশি, চামচ, মাছ এবং ১ থেকে ৮ পর্যন্ত সংখ্যা।

বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষক। তাঁকে ঘিরে একদল কচিকাঁচা। বাঁশি, চামচ, মাছ এবং সংখ্যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের চলছে অঙ্ক শেখানোর কাজ।

Advertisement

শনিবার থেকে উলুবেড়িয়ার বাহাদুরপুর প্রাথমিক স্কুলে এ ভাবেই প্রথম শ্রেণি এবং প্রাক্-প্রাথমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খেলতে খেলতে পড়াশোনা চালু হল। ক্লাসের নাম ‘খেলাঘর’।

পরিত্যক্ত একটি শ্রেণিকক্ষকেই ওই রূপ দেওয়া হয়েছে। শুধু অঙ্কই নয়, প্রকৃতি পাঠ, বাংলা, ভূগোল— এখানে সব কিছুই শেখানো হবে ছবি ও মডেলের মাধ্যমে। শ্রেণিকক্ষে নেই বসার বেঞ্চ। নেই শিক্ষকের চেয়ার-টেবিল। শুধু ছবি আর মডেলেই ভরা এই শ্রেণিকক্ষ।

প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ পাল বললেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা যাতে আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারে, সেটাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। খেলাঘর সাজানোর জন্য আমরা সরকারের তরফ থেকে অতিরিক্ত টাকা পাইনি। উন্নয়নের জন্য নিয়মমাফিক যে বরাদ্দ পাই, তা দিয়েই চালু করা হয়েছে।’’

২০১৩ সাল থেকে কেন্দ্র সরকার চালু করেছে ‘আনন্দদায়ক ও সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষাদান’ পদ্ধতি। প্রথাগত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের এই পদ্ধতিতে পড়ানোর উপরেই জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। কী ভাবে এটা করা হবে তা সংশ্লিষ্ট স্কুলের হাতেই ছেড়ে দিতে চাইছে সরকার। বাহাদুরপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা নিজেদের মতো করেই চালু করে দিয়েছেন এই পদ্ধতি। প্রথম শ্রেণি এবং প্রাক্ প্রাথমিক বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে পড়ানো অবশ্য বন্ধ হচ্ছে না। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে প্রচলিত পদ্ধতি থেকে সরে আসা হবে। প্রথম শ্রেণি এবং প্রাক্ প্রাথমিক বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা বেশির ভাগ সময় কাটাবে খেলাঘরে।

স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড়শো। অধিকাংশই আসে দিনমজুর, জরির কারিগর বা দরজির পরিবার থেকে। অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মায়ের সঙ্গে জমিতে ধানের বীজতলা তোলার কাজও করে। এ ভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি মুসকান পারভিন, সাবনুর খাতুনের মতো পড়ুয়ারা।

শিক্ষকের সঙ্গে তাল দিয়ে উৎসবের মেজাজে বাঁশি, চামচ, মাছের সংখ্যা মিলিয়ে দিয়ে যোগ-বিয়োগ শিখছে তারা। মূলত যে শিক্ষকের উদ্যোগে গত এক বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে ‘খেলাঘর’, সেই সুকোমল সাউ বললেন, ‘‘ছাত্রদের মধ্যে খেলাঘর নিয়ে যে আগ্রহ দেখছি, তাতে এই নতুন পদ্ধতি সফল হবে বলে আমি আশাবাদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন