স্কুল কেন বন্ধ, বিক্ষোভ ছাত্রীদের

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের অভিযোগ, ওই স্কুলে বাংলা মাধ্যমের অনুমোদন থাকলেও বছর পাঁচেক আগে থেকে কোনও সরকারি অনুমোদন ছাড়াই হিন্দি মাধ্যমে স্কুল চালানো হচ্ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১০
Share:

স্কুল খোলার দাবিতে ছাত্রীদের বিক্ষোভ। শুক্রবার, হাওড়ার বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের অসহিষ্ণুতার নজির বেড়েই চলেছে। স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে শুক্রবারের পর শনিবার সকালেও পড়ুয়াদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে হাওড়ার বিনোদিনী বালিকা বিদ্যাভবন। এ দিনের বিক্ষোভে অভিভাবকেরা যোগ দেওয়ায় বিক্ষোভকারীরা যেন বাড়তি সমর্থন পেয়ে যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্য শিক্ষিকাদের একটি ঘরে আটকে করে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শিক্ষিকাদের উদ্ধার করে জেলা শিক্ষাভবনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ির সামনে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। আগামী সোমবার বৈঠক করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে বলে জানানো হলে পরিস্থিতি আয়ত্বে আসে।

Advertisement

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের অভিযোগ, ওই স্কুলে বাংলা মাধ্যমের অনুমোদন থাকলেও বছর পাঁচেক আগে থেকে কোনও সরকারি অনুমোদন ছাড়াই হিন্দি মাধ্যমে স্কুল চালানো হচ্ছিল। এ ব্যাপারে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বারবার জানানোর পরে গত জুলাই মাসে স্কুলের পরিচালন কমিটি ভেঙে দিয়ে এক জন প্রশাসককে স্কুলটি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পরই প্রশাসক পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া স্কুল চালানোয় আপত্তি করেন।

বিনোদিনী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা মালিকা ভট্টাচার্য জানান, তাঁরা তখনই পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঠিক করেন, পরবর্তী সেশনে পড়ুয়াদের বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে, হিন্দি মাধ্যম স্কুলটি চালানো হবে কি না তা পর্ষদের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেবেন। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘এই কাজ করতে গিয়েই আমাকে এই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। স্কুল বন্ধের নোটিস দেওয়ার পরেই ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। আমরা যে ছাত্রীদের অন্য স্কুলে ভর্তি করার ব্যাপারে কথা বলতে যাব, সেই সুযোগটুকু পাচ্ছি না।’’

Advertisement

জেলা স্কুল দফতর সূত্রের খবর, স্কুল বন্ধের নোটিস দেওয়ার পরেই শুক্রবার স্কুলে একদফা বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা। এ দিন সকালে স্কুলে শিক্ষিকারা আসার পরেই স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকেরাও। অভিযোগ, দীর্ঘ ২-৩ ঘন্টা ধরে শিক্ষিকাদের আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে হাওড়া থানা থেকে পুলিশ বাহিনী আসে শিক্ষিকাদের উদ্ধার করতে। শিক্ষিকাদের নিয়ে গাড়িতে করে জেলা শিক্ষা দফতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ির সামনে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।

ছাত্রীদের অভিযোগ, গোটা স্কুলে বাংলা মাধ্যমে মাত্র ১২ জন পড়ুয়া রয়েছে। অন্য দিকে হিন্দি মাধ্যমে দু’শোর বেশি ছাত্রী পড়ে। তা হলে ওই হিন্দি মাধ্যমকে বন্ধ করে কেন বাংলা মাধ্যমকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কেনই বা তাদের অন্য স্কুলে ভর্তি হতে হবে।

এক ছাত্রী নেহা রায় বলে, ‘‘রেজাল্ট নেওয়ার জন্য ৪ জানুয়ারি স্কুলে আসতে বলা হয়েছিল আমাদের। ওই দিন এসে দেখি স্কুল বন্ধের নোটিস! আমরা বুঝতে পারছি না, কেন স্কুল বন্ধ করে আমাদের অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে।’’

পুলিশের গাড়ি ঘিরে প্রায় আধঘন্টা ধরে বিক্ষোভ চলার পরে জেলা শিক্ষা দফতর থেকে ছাত্রীদের জানানো হয়, সব সমস্যার মীমংসা সোমবারের বৈঠকে করা হবে। তাই ছাত্রীরা যেন ফিরে যায়। এর পরেই ছাত্রীরা শান্ত হয়।

হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) নজরুল হক সিপাই বলেন, ‘‘এটা ঠিক, যে ওই স্কুলে হিন্দি মাধ্যমের কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। আমি এই বিষয়টা পর্যদকে জানিয়েছি। পর্ষদ যা নির্দেশ দেবে, তাই করা হবে। তাই সোমবার জেলা শিক্ষা দফতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে বলা হয়েছে, তিনি কী চাইছেন তা জানিয়ে লিখিত চিঠি দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন