পোস্টার-কাণ্ডের তদন্তে মিলল আরও সূত্র, গ্রেফতার পুলিশ অফিসার

সমীরবাবুকে নিয়ে ওই পোস্টার-কাণ্ডে মোট তিন জনকে গ্রেফতার করা হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪০
Share:

সমীর সরকার। —নিজস্ব িচত্র

প্রায় তিন দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুরুচিকর পোস্টার সাঁটানোর অভিযোগে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হল পুলিশ অফিসার সমীর সরকারকে। নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে ‘সাসপেন্ড’ও করা হয়েছে।

Advertisement

সমীরবাবুকে নিয়ে ওই পোস্টার-কাণ্ডে মোট তিন জনকে গ্রেফতার করা হল। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘সমীরবাবুর ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার নির্দিষ্ট কিছু সূত্র মিলেছে। আরও যারা ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে, তাদের খোঁজ চলছে।’’ মামলার সরকারি আইনজীবী অতনুকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘পোস্টার-কাণ্ডে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের জড়িত থাকার সব প্রমাণই পুলিশের কাছে মজুত আছে। না হলে পুলিশ নিজেই কোনও অফিসারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়!’’

সমীরবাবুকে এ দিনই শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতের এসিজেএম অমর মাহাতোর এজলাসে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে দু’দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের কাছে ধৃত সমীরবাবু দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। সাংসদ কল্যাণবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি লোকসভা নির্বাচনে ওঁর (কল্যাণবাবু) জন্য এত পরিশ্রম করলাম। ওঁর সভার জন্য চার দিন মাঠে পড়ে রইলাম। উনি এই প্রতিদান দিলেন? আমি সেই রাতে (২৯ জুলাই রাতে ওই পোস্টার সাঁটানো হয়েছিল) গাড়িতে ছিলাম কিনা, সেটা কল্যাণবাবুকেই গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন।’’

Advertisement

কল্যাণবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘পুলিশের তদন্তে যা উঠে এসেছে, পুলিশ তা-ই করেছে। কোনও সরকারি অফিসারকে ফাঁসানো আমার কাজ নয়।’’ একই সঙ্গে সাংসদের অভিযোগ, ‘‘উনি সরাসরি বিজেপি-র হয়ে নির্বাচনে কাজ করেছিলেন। আমাদের ছেলেদের মারধর করেছিলেন। পুলিশের চাকরিতে উনি মাঠে না ঘাটে থাকবেন, আমার দেখার কথা নয়।’’ তাঁদের সঙ্গে সমীরবাবুর সংস্রবের কথা মানতে বিজেপির রাজ্য ওবিসি মোর্চার সভাপতি স্বপন পাল।

জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিআইবি) সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত থাকা সমীরবাবুর গ্রেফতারি নিয়ে এ দিন শ্রীরামপুর থানা এবং আদালত চত্বর সরগরম ছিল। নীল শার্ট এবং জিনস্ পরিহিত সমীরবাবুকে দৃশ্যতই বিভ্রান্ত লাগছিল। থানা থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা এড়াতে তিনি সাদা রুমালে মুখ ঢাকেন। এজলাসের ভিতরে তাঁকে আসামিদের সঙ্গেই লোহার জালের ঘেরা জায়গায় রাখা হয়। আদালত থেকে বের হওয়ার সময়ও তিনি ফের ক্যামেরা এড়াতে পুলিশকে বার বার গাড়ি ঘোরানোর অনুরোধ করতে থাকেন। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু জানান, সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে। বিধি অনুযায়ী তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

গত ২৯ জুলাই গভীর রাতে শ্রীরামপুর স্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকায় সাংসদ কল্যাণের বিরুদ্ধে ‘কাটমানি-পোস্টার’ পড়ে। তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিক্যামেরার ফুটেজ দেখে একটি গাড়ি আটক করে। পরে দেখা যায়, ভাড়াগাড়িটি সমীরবাবু ব্যবহার করছিলেন। গাড়ির চালক-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। দু’জনেই দাবি করে, ওই রাতে গাড়িতে সমীরবাবুও ছিলেন। সমীরবাবুকে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হয়। পুলিশ আলোচনায় ডাকলেও তিনি সাড়া দেননি। শনিবার রাত থেকে জিজ্ঞাসাবাদ চললেও আগাগোড়া সমীরবাবু সব কথা অস্বীকার করেন বলে পুলিশের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন