উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র। নিজস্ব চিত্র
বড়সড় দোতলা বাড়ি। দেওয়ালে দেওয়ালে সিসি ক্যামেরা।
হুগলি স্টেশনের কাছে কানাগড়ের এই বাড়িতেই বুধবার দিনভর তল্লাশি চালান আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হন গৃহকর্তা তথা চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির শাসকদলের সভাপতি দিলীপ দাসের ছোট ছেলে জয়প্রকাশ। তিনি চুঁচুড়া আদালতের আইনজীবী।
লোকসভা ভোটের মুখে এই ঘটনা নিয়ে সরগরম হুগলি জেলার রাজনীতি। বিরোধীরা সরব হয়েছে। শাসকদল অস্বস্তিতে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে কে এই দিলীপবাবু?
চুঁচুড়ার কারবালার কাছে একটি প্রাথমিক স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন দিলীপবাবু। ২০১২ সালে অবসর নেন। তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা দাস ওই ব্লকের কোদালিয়া ২ পঞ্চায়েতের সদস্য। তিনি আগে এই পঞ্চায়েতের প্রধানও ছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, জয়প্রকাশ আইনজীবী হলেও বেশ কিছু দিন প্র্যাকটিস করেন না। তিনি পোলট্রির ব্যবসা করছিলেন। কয়েক মাস ধরে ওই ব্যবসা বন্ধ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজনীতিতে দিলীপবাবুর হাতেখড়ি একটু বেশি বয়সেই। প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ আকবর আলি খন্দকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি জমির ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। পরে দলের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সেই ব্যবসা ছেড়ে দেন। তবে, জমি তাঁর পিছু ছাড়েনি। চুঁচুড়া সদরের একটি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের দখল হয়ে যাওয়া ত্রিশ বিঘের সম্পত্তি উদ্ধারে দুই দশকেরও বেশি সময় তিনি আইনি লড়াই লড়েন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই আইনি লড়াইয়ে দিলীপবাবু চক্ষুশূল হন চুঁচুড়ার এক বড় মাপের তৃণমূল নেতার। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা হয়। ওই নেতার কথায় দুষ্কৃতীরা দিলীপবাবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। সেই ঘটনার সাক্ষী, শাসকদলের এক ব্লক স্তরের নেতা বলেন, ‘‘কয়েক লক্ষ টাকা আক্কেল-সেলামি দিয়ে মাস্টারমশাই ছাড় পান। নেতাদের পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে পুলিশে আর অভিযোগ করা হয়নি।’’ পরেও অবশ্য ওই ‘তাবড়’ তৃণমূল নেতার দুই শাগরেদের বিরাগভাজন হন দিলীপ মাস্টার। বছর দুয়েক আগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার রায় ঘোষণা হয়। আদালতের নির্দেশে মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের মূল সেবাইতের দায়িত্ব পান দিলীপ।
এলাকায় দিলীপবাবুর ‘ফুলে-ফেঁপে’ ওঠা নিয়ে চর্চাও কম নয়। বিরোধীদের দাবি, কয়েক বছর ধরে তাঁর সাদামাটা জীবনযাপনে পরিবর্তন আসে। তাঁর ইউরোপ বেড়াতে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এখন বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা তাঁদের হাতে রাজনৈতিক অস্ত্র তুলে দিল বলে বিরোধী নেতারা মনে করছেন। এলাকাতেও এ সব নিয়ে ফিসফাস চলছেই।
দিলীপের দাবি, ‘‘চুঁচুড়ার বড়বাজারে আমি যে মন্দিরের সেবাইত, তার সংস্কার বা সম্পত্তি বিক্রির অধিকার আমার রয়েছ। সম্পত্তি বেচে কিছু টাকা পেয়েছি। চল্লিশ বছর শিক্ষকতা করেছি। আমার বড় ছেলে শিক্ষক। বাবাও প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ঠাকুর্দা টোলে পড়াতেন। একবারই ইউরোপ গিয়েছি। আয়কর অফিসাররা আমার বাড়ি থেকে কোনও হিসেব বহির্ভূত টাকা পাননি। জয়প্রকাশের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিলই না। এটা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র। এতে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে না।’’