জমি সংক্রান্ত কাজে গতি আনতে এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য ‘ই-ভূচিত্র’-এর কাজ শুরু হয়েছিল হাওড়ার বিভিন্ন ব্লকে। অর্থাৎ, সাবেক পদ্ধতি ছেড়ে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম চালানো হবে। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার তিন মাস পরেও সাতটি ব্লকে সেই কাজ এখনও শেষ হল না। ফলে, জমির ‘মিউটেশন’ (নামপত্তন) এবং ‘কনভারশন’ (চরিত্র পরিবর্তন)-এর কাজ করাতে গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে ওই সব এলাকার সাধারণ মানুষকে।
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। কিন্তু সমস্যা কবে মিটবে, সে ব্যাপারে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি ওই দফতরের কর্তারা। তাঁরা জানান, একটি বেসরকারি সংস্থাকে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার জন্য কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। ওই সংস্থাকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। তবে, একই সঙ্গে তাঁরা জানান, দাবি, সাময়িক ভাবে অসুবিধা হলেও ব্লকগুলির সঙ্গে রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে তাতে মানুষের সুবিধাই হবে। দ্রুত ‘মিউটেশন’ এবং ‘কনভারসন’-এর কাজ করা যাবে।
যে সাতটি ব্লকে সমস্যাটি দেখা যাচ্ছে সেগুলি হল— বাগনান-১, বাগনান-২, শ্যামপুর-১, উদয়নারায়ণপুর, বালি-জগাছা এবং আমতা-১ ও ২। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জমি সংক্রান্ত তথ্যগুলি রয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। ‘ই-ভূচিত্র’ তৈরি হলে সেই সব তথ্য রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছেও পাওয়া যাবে। নতুন ব্যবস্থায় জমি যে দিন কেনাবেচার জন্য ‘রেজিস্ট্রি’ হবে, সঙ্গে সঙ্গে সেই তথ্য চলে যাবে রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। শুধু তাই নয়, ওই জমির ‘মিউটেশন’ এবং ‘কনভারসন’ সংক্রান্ত তথ্যও মিলবে সেখানে। সেই কারণে বিভিন্ন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগ করা হচ্ছে।
কাজটি করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। কাজটি শুরু হয় গত নভেম্বর মাসে। কথা ছিল জানুয়ারি মাসের মধ্যেই কাজটি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও রাজ্য দফতরের সঙ্গে ওই সাতটি ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। তার ফলেই ওই ব্লকগুলিতে জমির ‘মিউটেশন’ এবং ‘কনভারসন’-এর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ বিপাকে পড়ছেন। বিশেষ করে যে সব গ্রামবাসী ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা অসুবিধায় পড়ছেন। কারণ, নিজের নামে জমির ‘মিউটেশন’ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ব্যাঙ্ক-ঋণ পাচ্ছেন না। তাঁদের অভিযোগ, এমনিতেই দরখাস্ত করার পরে অন্তত ছ’মাস লেগে যায় জমির ‘মিউটেশন’ করাতে। এই অবস্থায় ফের চালু হলেও মিউটেশন করাতে কত দিন লাগবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন তাঁরা।
তবে উলুবেড়িয়া-১, পাঁচলা, সাঁকরাইল এবং ডোমজুড় ব্লকে এই সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, এই সব ব্লক মূলত শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই চালু ছিল। সেটিকে শুধু রাজ্য দফতরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কাজটি করতে হচ্ছে। ফলে, এই সব ব্লকে মিউটেশন ও কনভারসনের কাজ পুরোপুরি বন্ধ নেই। অন্য দিকে জগৎবল্লভপুর ও উলুবেড়িয়া ২ ব্লকে কাজটি আপাতত করা হচ্ছে না। ফলে, এখানেও পুরনো পদ্ধতিতে ‘মিউটেশন’ এবং ‘কনভারসনের’ কাজ চলছে।