আত্মসমর্পণের পর বিক্রম।—নিজস্ব চিত্র।
আট দিনেও তাঁর নাগাল পায়নি পুলিশ। চাঁপদানি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, চাঁপদানি পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম গুপ্ত সোমবার নিজেই ভদ্রেশ্বর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিল না। তাঁকে সাত দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে চন্দননগর আদালত। আদালত চত্বরে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে বিক্রম জানান, সাংসদের নির্দেশেই তিনি আত্মসমর্পণ করলেন।
রাস্তায় মোটরবাইক ‘চেকিং’-এর সময় যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় গত ৫ এপ্রিল বিক্রমের পরিচিত এক মোটরবাইক আরোহীকে ধরে চাঁপদানি ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। অভিযোগ, সেই যুবকের ফোন পেয়েই থানায় সদলবলে চড়াও হয়ে বিক্রম ভাঙচুর চালান এবং পুলিশকর্মীদের মারধর করেন। ভদ্রেশ্বর থানার (চাঁপদানি ফাঁড়ি ওই থানার অধীনেই) ওসি অনুদ্যুতি মজুমদার-সহ জখম হন ৯ পুলিশকর্মী।
ওই রাতেই তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১৪ জনকে ধরে। কিন্তু বিক্রম ‘পলাতক’ বলে দাবি ছিল পুলিশের। অথচ, সোমবার বিকেলে তাঁকে নিজের এলাকাতেই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। তার পরেও বিক্রম ধরা না পড়ায় পুলিশের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। গত শনিবার রাজ্য নির্বাচনও বিক্রমকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। সেই মতো পুলিশ তৈরিও হচ্ছিল বলে জানান হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। কিন্তু তার আগে বিক্রম নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন।
ফাঁড়িতে হামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের উদ্দেশ্যে আক্রমণ, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ ১০টি ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এ দিনই বিক্রমকে চন্দননগর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট জয়শঙ্কর রায়ের এজলাসে হাজির করানো হয়। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে কোনও আবেদনই করেনি পুলিশ। ফলে, বিচারক বিক্রমকে সাত দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এর আগে ধৃত ১৪ জনকেও পুলিশ নিজেদের হেফাজতে চায়নি।
হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বিক্রমকে কেন পুলিশ নিজেদের হেফাজতে চাইল না?
জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘যে সব ক্ষেত্রে পুলিশের তল্লাশি করে কিছু উদ্ধারের প্রয়োজন থাকে, সেই সব ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে চায় অভিযুক্তকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে প্রয়োজন নেই। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার যদি চান, জেলে গিয়েই ধৃতকে জেরা করতে পারেন। তাতে আইনে কোনও বাধা নেই।’’
এ দিন অভিযুক্ত ওই তৃণমূল প্রার্থীকে যখন আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সেখানে ভিড় করেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। বিক্রম বলেন, ‘‘সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতোই আইনকে সম্মান করে আত্মসমর্পণ করলাম। আমি কী ভুল করেছি জানি না। আত্মীয়ের গাড়ি ছাড়াতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কের জেরে অন্য দলের লোকেরা ফাঁড়িতে হামলা করল। পুলিশই আমাকে মারধর করল। আর ভোটের আগে বিরোধীরা চক্রান্ত করে আমার উপরে দোষ চাপিয়ে জেলে পাঠাল।’’ শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্দেশ দিয়েছে, তাই আমি ওঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলি। পুলিশ ওঁকে মারধর করেছে। ওঁর হয়ে আইনি লড়াই দলই লড়বে।’’ পুলিশ প্রথম থেকেই বিক্রমকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।