আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও গুদামঘর খুলতে না-দিয়ে এক ব্যবসায়ী এবং তাঁর কর্মচারীকে পুলিশের সামনেই মারধরের অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুরের ঘটনা। অভিযুক্ত আচ্ছালাল যাদব শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। তিনি অভিযোগ মানেননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কানাইপুরের আদর্শনগরে যোগেন্দ্রকুমার গুপ্ত নামে এক ব্যবসায়ী ভোজ্য তেলের একটি গুদাম চালান। তিন মাস আগে একটি ট্যাঙ্কার থেকে তেল চুরির মামলায় ডানকুনি থানার পুলিশ ওই গুদামে হানা দেয়। গুদামটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাসখানেক আগে আদালত গুদামটি খোলার নির্দেশ দেয়। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সেই সময় গুদাম খুলতে গেলে আচ্ছালালের লোকজন বাধা দেন। তখন তাঁরা শ্রীরামপুর আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত নির্দেশ দেয়, গুদাম খুলতে বাধা দেওয়া যাবে না। সেইমতো আদালতের নির্দেশে শুক্রবার দুপুর দু’টো নাগাদ যোগেন্দ্র, তাঁর ভাই দুর্গাশঙ্কর এবং অমরনাথ প্রসাদ নামে এক কর্মী সেখানে যান। নিরাপদে তাঁরা যাতে গুদাম খুলতে পারেন, সে জন্য পুলিশও যায়।
অভিযোগ, তালা খুলতে যেতেই আচ্ছালাল এবং আরও দু’জন হামলা করে। লাথি, ঘুষি, এমনকী, রড দিয়েও তাঁদের মারা হয়। হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। দুর্গাশঙ্কর কোনওক্রমে পুলিশের কাছে চলে যান। সেখানেও তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে এবং অমরনাথকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে দুর্গাশঙ্করকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অমরনাথ চিকিৎসাধীন।
দুর্গাশঙ্কর বলেন, ‘‘অমরনাথ ক্যান্সারের রোগী। তবু তাঁকে রেয়াত করা হয়নি।’’ রাতেই আচ্ছালাল-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে উত্তরপাড়া থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বলে যোগেন্দ্রবাবু জানিয়েছেন। পুলিশের দাবি, লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। গোলমালের কথা শুনে ওই দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কোনও আক্রান্তের দেখা মেলেনি। গুদাম খুলতে পুলিশ যায়নি।
যোগেন্দ্রর প্রশ্ন, ‘‘আদালত যেখানে নির্দেশ দিচ্ছে, সেখানে ওই নেতা হস্তক্ষেপ করছেন কেন?’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ট্যুইটারের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘটনার কথা জানিয়েছি। উনি ‘ট্যুইটারেই ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনেছি। দলের তরফে তদন্ত করা হবে।’’
মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আচ্ছালালবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘ওই ব্যবসায়ী স্বাধীন ভাবেই ব্যবসা চালাতেন। কিন্তু পুলিশের অভিযানে দু’নম্বরী কারবার সামনে আসায় স্থানীয় লোকেরা ক্ষেপে যান। তাই তাঁরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করেছেন। ওই সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। গ্রামবাসীদের তাড়ায় ওঁরা পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন। এখন মনগড়া অভিযোগ করছেন।’’