বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার কাজে অসন্তোষ মন্ত্রী ও সাংসদের। বুধবার আরামবাগের কাচগড়িয়ায়। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোট হওয়া ইস্তক আরামবাগে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা বিজেপির হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। বুধবার সেই আক্রান্তদের কথা শুনতে গিয়ে বিধায়ককেই ধমকালেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। সেই ধমকের পরে বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা আবার মন্ত্রী-সাংসদের আচরণের নিন্দা করলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ছিঃ!’’
তখন বেলা প্রায় পৌনে ১টা। আরামবাগের কাচগড়িয়া গ্রামে দলীয় কার্যালয় চত্বরে কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ শুনছিলেন মন্ত্রী রাজীব। হঠাৎই তিনি বলে ওঠেন, ‘‘এ সব এলাকার নেতারা দেখেননি কেন?”
উত্তর পাওয়ার আগেই দলের ব্লক সভাপতি তথা আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মন্ত্রীর প্রশ্ন, “আপনারা এঁদের পাশে নেই কেন?”
এরপরেই মন্ত্রীর হাঁক, “কোথায় বিধায়ক?” কাছেই আরামবাগের দলীয় বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্রবাবুকে দেখতে পেয়ে রাজীবের প্রশ্ন,, “কৃষ্ণদা আপনি তো এঁদের এজেন্ট। আপনি এদের সাপোর্ট না দিলে কে দেবে? আজকে না হয় আমরা এসেছি।”
বিধায়কের উত্তর, ‘‘আমাদের তরফ থেকে যতটা সম্ভব সাপোর্ট দিচ্ছি। কিন্তু আমরা...।” কথা শেষ করতে দিলেন না সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। ধমকের মাত্রা বাড়িয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী দিয়েছেন?” পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় বাতানল পঞ্চায়েতের দলীয় সদস্য রেণুকা পন্ডিত। তাঁকে দেখিয়ে সাংসদের প্রশ্ন, “ইনি বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাবেন, পয়সা নেই। আপনি এসেছিলেন বাড়িতে? একটাই প্রশ্ন, একটাই উত্তর দেবেন।”
বিধায়ক: “না আসিনি। তবে...।”
কথা শুনলেন না কাকলিদেবী। ফের প্রশ্ন, “কেন আসেননি? ওতো পঞ্চায়েত সদস্য। আক্রমণের মুখে পড়া সত্ত্বেও কেন আসেননি?” বিধায়ক তখন বলে চলেছেন, “আগে আমার কথাটা শুনুন।” কিন্তু শেষ করতে পারছিলেন না। রাজীববাবু বিধায়ককে প্রায় ঠেলতে ঠেলতে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে নিয়ে গেলেন। বিধায়ক পিছন ফিরে কাকলিদেবীকে বলে গেলেন, “আমরা কথাটা শুনতে হবে।” আবার কাকলিদেবীর প্রশ্ন, “একে টিকিট কে দিয়েছে?”
সামনাসামনি আর কাকলিদেবীর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সুযোগ পাননি কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। কাকলিদেবীরা আরামবাগ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা চলে যান। পরে আরামবাগের বিধায়ক মন্ত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি কর্মীদের পাশে না-থাকতাম, তা হলে তাঁরা বাড়িতে আছেন কী করে! সেই বোধটুকুও সাংসদের নেই। ওই পঞ্চায়েত সদস্যের আর্থিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই রকম কিছু নেতানেত্রীর (রাজীব-কাকলিদেবী) জন্য দলের মজবুত ভিতটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাঠিয়েছেন, দলের কর্মী-সমর্থকদের সাহস দিতে, পাশে থাকার বার্তা দিতে। বদলে অবান্তর কথা বলে দলের কর্মীদের সঙ্গেই আমাদের দূরত্ব তৈরি করে দিচ্ছেন! ছিঃ।”
এ দিন আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের ‘হিংসা কবলিত’ এলাকাগুলিতে কর্মীদের সাহস জোগাতে তৃণমূলের শীর্ষ স্তর থেকে যে পরিদর্শক দল পাঠানো হয়েছিল, সেই দলেরই সদস্য ছিলেন রাজীব এবং কাকলিদেবী। দলে ছিলেন মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল, আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার এবং আরামবাগ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদবও। দলটি প্রথমে তারকেশ্বর বিধানসভা এলাকায় যায়। সেখান থেকে আরামাবাগের মলয়পুর হয়ে নারায়ণপুরে এসে দখল হওয়া দলীয় কার্যালয়ে বিজেপির পতাকা খুলে তৃণমূলের পতাকা লাগান মন্ত্রী রাজীববাবু। সেখান থেকে তাঁরা আসেন কাচগড়িয়ায়। সেখানে রেণুকা পণ্ডিত এবং তাঁর স্বামীর মুখে অত্যাচারের কথা শুনেই মন্ত্রী চটে গিয়ে বিধায়কের খোঁজ করেন।