ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ আমতায়

কুপিয়ে, শিরা কেটে দলীয় কর্মীকে খুন

রাস্তার মধ্যে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, হাত-পায়ের শিরা কেটে আমতার বসন্তপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ হান্নান হককে (৪৫) খুন করা হল মঙ্গলবার রাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আমতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ০২:২০
Share:

রক্তাক্ত: তখনও ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ।

রাস্তার মধ্যে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, হাত-পায়ের শিরা কেটে আমতার বসন্তপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ হান্নান হককে (৪৫) খুন করা হল মঙ্গলবার রাতে। বসন্তপুরের পশ্চিমপাড়ায় তাঁর বাড়ির কাছেই। খুনের পরে এলাকার অন্তত ২৫টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। কেউ বাইরে বেরোলে তাঁর প্রাণনাশেরও হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

অভিযুক্তেরা হলেন দলে হান্নানের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা ইদ্রিস জমাদার এবং তাঁর অনুগামীরা। ইদ্রিশকে ধরতে না-পারলেও পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। সকলেই তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। হাওড়া (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুমিতকুমার জানিয়েছেন, ২৮ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। ইদ্রিশের সঙ্গে হান্নানের পরিবারের বিবাদ তো ছিলই, দু’জনের মধ্যে এলাকার দখল নিয়েও গোলমাল ছিল। কী কারণে খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পলাতক অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।

দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না বলে বারবার নেতা-কর্মীদের সতর্ক করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও রাজ্যের নানা প্রান্তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা সামনে আসছে। মঙ্গলবার পশ্চিমপাড়ায় হান্নানকে কুপিয়ে খুনের পরে মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে তাঁর দু’টি হাত এবং দু’টি পায়ের শিরাও কেটে দেয় দুষ্কৃতীরা। হান্নানের মা মেহেরুন্নেসার অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে আমার ছেলেকে সরিয়ে নিজের পছন্দের কাউকে প্রার্থী করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইদ্রিস। তাই সে আমার ছেলেকে সরিয়ে দিল।’’ এলাকাবাসী জানান, গ্রামে কার দাপট বেশি থাকবে তা নিয়ে হান্নান এবং ইদ্রিসের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত। উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে একাধিকবার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

Advertisement


নিহত শেখ হান্নান হক।

এলাকাটি আমতা থানার অধীনে হলেও উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানেননি তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা। বুধবার দুপুরে বসন্তপুরে এসে তিনি হান্নানের স্ত্রী এবং মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা ইদ্রিস ও তাঁর অনুগামীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে সমীরবাবু তাঁদের আশ্বস্ত করেন। তবে, পরে বিধায়কের দাবি, ‘‘হান্নান এবং ইদ্রিস দল‌ের লোক হলেও ওঁদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরেই খুন বলে মনে হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হান্নান প্রোমোটারি করতেন। বসন্তপুর বাজারে তাঁর একটি বাণিজ্যিক চত্বর আছে। একটি আসবাবপত্রের দোকানও রয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বড় ছেলেকে দোকানে বসিয়ে হান্নান মোটরবাইকে বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে যান এক পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি। রাত ১০টা নাগাদ আসেন উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দলের যুব সভাপতি শেখ হাসানের বাড়িতে। মিনিট দশেক পরে সেখান থেকে বেরোন। বাড়ি ঢোকার আগে তেমাথার মোড়ে একটি বটগাছের তলায় তিনি আক্রান্ত হন। অন্তত ১০-১২ জন দুষ্কৃতী তাঁর উপরে হামলা চালায়।

দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও হান্নান বাড়ি না-ফেরায় তাঁর মা, স্ত্রী সাবিনা বিবি এবং ছেলে খুঁজতে বেরিয়ে দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁদের চিৎকারে গ্রামবাসীরা বেরিয়ে আসেন। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। হান্নান এবং ইদ্রিশ দু’জনেই সিপিএম ছেড়ে ২০০৯ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। দু’জনের বাড়ি পাশাপাশি। কিন্তু গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব ছিল বিস্তর। বুধবার ইদ্রিশের বাড়ি ছিল তালাবন্ধ।

ছবি: সুব্রত জানা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন