তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ

পুরশুড়ায় গুলিবিদ্ধ যুবনেতা

গুলিতে জখম হন শেখ রশিদ ওরফে গোপাল নামে এক যুবনেতা। তাঁর তলপেটে গুলি লাগে। তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ছুরি এবং লাঠির আঘাতে জখম হন আরও কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দলের ব্লক সভাপতি জয়দেব জানাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরশুড়া শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০৯
Share:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না বলে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে হুগলির পুরশুড়ায় সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামার লক্ষণই নেই! বরং দিন দিন তা জটিল হয়ে উঠছে।

Advertisement

শনিবার বিকেলে দলের মূল সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তেতে ওঠে পুরশুড়ার ঘোলদিগরুই বটতলা এলাকা। দু’পক্ষ পরস্পরের উপরে লাঠি-ছুরি নিয়ে চড়াও হয়। শুরু হয় বোমা-গুলির লড়াইও।

গুলিতে জখম হন শেখ রশিদ ওরফে গোপাল নামে এক যুবনেতা। তাঁর তলপেটে গুলি লাগে। তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ছুরি এবং লাঠির আঘাতে জখম হন আরও কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দলের ব্লক সভাপতি জয়দেব জানাও। ঘটনাস্থলে র‌্যাফ এবং পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।

Advertisement

গোলমালে জড়িত অভিযোগে পুলিশ যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে, তাঁরা সকলেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। এমনকী, যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে যাঁদের বিরুদ্ধে থানায় হামলার অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাঁদেরও তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিতি রয়েছে।

কিন্তু এ দিনের গোলমালকে জেলা তৃণমূল বা ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের কেউই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, ‘দুষ্কৃতীরা গোলমাল পাকিয়েছে।’

এসডিপিও (আরামবাগ) কৃশানু রায় বলেন, “গুলি চালানো-সহ বিশৃঙ্খলার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের ‘জনবিরোধী নীতি’র বিরুদ্ধে এ দিন পুরশুড়া মোড় থেকে ব্লক অফিস পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল তৃণমূলের মূল সংগঠন। মিছিলে যোগদানের জন্য ঘোলদিগরুই থেকে কর্মী-সমর্থকেরা স্থানীয় বটতলায় জড়ো হচ্ছিলেন। তখনই শ্যামপুর পঞ্চায়েতের সদস্য তথা ওই অঞ্চলে দলের যুব কার্যকরী সভাপতি শেখ রশিদ তাঁর অনুগামীদের নিয়ে সেখানে গিয়ে বাধা দেন বলে অভিযোগ।

তার পরেই শুরু হয় গোলমাল। শেখ রশিদকে প্রথমে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।

ঘটনার প্রতিবাদে যুব তৃণমূল কর্মীরা পুরশুড়া মোড়ে অবরোধ করেন। পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করলে ঘণ্টাখানেক পরে অবরোধ ওঠে। মিছিলও হয়। কিন্তু তার পরে পুরশুড়া মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে দলের ব্লক সভাপতি জয়দেববাবুকে রড-লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে যুব সংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)
কামনাশিস সেন।

কেন এই গোলমাল?

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, দলীয় কর্মসূচিতে আধিপত্য কাদের থাকবে, তা নিয়েই গোলমাল চলছে দীর্ঘদিন। জেলা নেতৃত্ব দুই সংগঠনকে একসঙ্গে চলতে বললেও তারা পৃথক ভাবে কর্মসূচি নিচ্ছে। জয়দেববাবু যেমন এ দিন মিছিলের আয়োজন করেন, তেমনই যুব সংগঠন ঠিক করেছে, আগামী ৩ মার্চ তারা মসিনান মাঠে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে এনে সভা করবে।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি জয়দেববাবু। এ দিনের ঘটনা নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালিয়েছে বলে থানায় জানিয়েছি।’’ পক্ষান্তরে, দলের ব্লক যুব সভাপতি খোকন মল্লিক (বাহাউদ্দিন) বলেন, “এক বালি-মাফিয়ার নেতৃত্বে ওই হামলা হয়।” তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘যারা গুলি করেছে বা ধরা পড়েছে তাদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশকে দোষীদের গ্রেফতার করতেবলা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন