নতুন বাইকের নেশায় পরপর চুরি ধৃতদের

বাইক চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া তিন পড়ুয়াকে জেরা করে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। গত রবিবার রাতে বালি থেকে সায়ন বেলুই, উত্তরপাড়া থেকে সৌমদীপ সাধুখাঁ এবং নিশ্চিন্দা থেকে অর্পণ ঘোষকে ধরে পুলিশ। উদ্ধার হয় তিনটি মোটরবাইক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি

নিত্যই নতুন মোটরবাইক চড়ার শখ। আর সে কারণেই দু’মাসের মধ্যে তিনটি বাইক চুরি করেছিল তিন কলেজপড়ুয়া। প্রতি ক্ষেত্রেই বাইকের লক খুলতে তারা ব্যবহার করেছিল একটি সাইকেলের চাবি!

Advertisement

বাইক চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া তিন পড়ুয়াকে জেরা করে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। গত রবিবার রাতে বালি থেকে সায়ন বেলুই, উত্তরপাড়া থেকে সৌমদীপ সাধুখাঁ এবং নিশ্চিন্দা থেকে অর্পণ ঘোষকে ধরে পুলিশ। উদ্ধার হয় তিনটি মোটরবাইক।

পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত তিন জনেই বাল্যবন্ধু। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তারা একই স্কুলে পড়েছে। বর্তমানে সায়ন ও সৌমদীপ দু’টি আলাদা কলেজে বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। অর্পণ হুগলির একটি পলিটেকনিক কলেজে পড়ে। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, বাইক চুরি করে সেটি বিক্রির কোনও পরিকল্পনা তাদের ছিল না। বরং সকলকে দেখিয়ে নতুন নতুন মডেলের বাইক চড়ে ঘুরে বেড়ানোই ছিল লক্ষ্য। আর তাই চোরাই বাইকের তেল ফুরিয়ে গেলেই সেটিকে রাস্তার ধারে বা ঝোপে ফেলে রেখে যেত ওই পড়ুয়ারা।

Advertisement

জেরায় পুলিশ জেনেছে, তিন জনের বাড়ির লোকেরা কেউই নতুন বাইক কিনে দিতে রাজি ছিলেন না। অগত্যা এক সময়ে তারা ঠিক করে, বাইক চুরি করে তাতে চেপে ঘুরবে। সেই মতো মাস দুয়েক আগে উত্তরপাড়া এলাকা থেকে তারা প্রথম বাইক চুরি করে। সায়নের সাইকেলের চাবি দিয়েই খোলা হয় বাইকের লক। এমনকি ওই চাবি দিয়ে অন্য বাইকেরও লক খোলা যাচ্ছে দেখে সেটিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে তিন জন। প্রথম বাইকটি দু’-তিন দিন চালানোর পরে তেল শেষ হয়ে যেতেই সেটিকে বালি খাল সংলগ্ন একটি ঝোপে ফেলে দেয় ওই পড়ুয়ারা। এর পরে দিন কয়েক আগে বালি রাসবাড়ি মেলায় গিয়ে সেখান থেকে আরও একটি বাইক চুরি করে। কয়েক দিন পরে তেল শেষ হতে সেটিকেও বালির একটি রাস্তার উপরে ফেলে রেখে যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাইকগুলি চুরির সময়ে তিন বন্ধুর যে কোনও এক জন উপস্থিত থাকত। সাইকেলের চাবি দিয়ে বাইকের লক খুলে তা নিয়ে সে পৌঁছে যেত দূরে অপেক্ষা করা দুই বন্ধুর কাছে। এর পরে ওই বাইকে চেপে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত তারা। রাসবাড়ি মেলা থেকে শেষ যে বাইকটি চুরি করেছিল তিন জন, সেটি নিশ্চিন্দায় অর্পণের ফ্ল্যাটের সামনে ঢাকা দিয়ে রাখা ছিল। কারণ হিসেবে অর্পণ বন্ধুদের জানিয়েছিল, ওই বাইকের ইঞ্জিন থেকে তেল বেরিয়ে যাচ্ছে। রাসমেলা থেকে দু’টি বাইক চুরির তদন্তে নেমে বালি পুলিশ জানতে পারে, শেষ দু’মাসে অর্পণকে তিনটি নতুন বাইক নিয়ে ঘুরতে দেখেছেন বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। সন্দেহ হতেই খোঁজখবর নিয়ে তদন্তকারীরা অর্পণের কাছে ‘মাস্টার কি’ থাকার কথাও জানতে পারেন। এর পরেই ওই তরুণ সহ বাকি দু’জন গ্রেফতার হয়।

তদন্তকারীদের অনুমান, বাইকগুলি বিক্রি করার যেহেতু কোনও পরিকল্পনা ওই পড়ুয়াদের ছিল না, তাই তার নম্বর প্লেট বদলানোরও চেষ্টা করেনি তারা। চুরির পরেও একই নম্বর প্লেট নিয়ে অবলীলায় ঘুরে বেড়াত। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘একের পর এক বাইক চুরি করেও ধরা পড়ছে না দেখে এক সময়ে ওদের লোভ হয়তো আরও বেড়ে যেত। তখন হয়তো চোরাই বাইক বিক্রির পরিকল্পনা করে বড় কোনও চক্রের হাতে পড়ত।’’ ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে অন্যান্য থানাও বাইক চুরির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন