হাওড়ায় সমস্যায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

মজুরি জটে থমকে শৌচাগার প্রকল্প

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য জেলার মতোই হাওড়াতেও মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে হাওড়া ‘নির্মল জেলা’র তকমাও পেয়েছে। এই প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির জন্য মোট খরচ হয় ১০ হাজার ৯০০ টাকা। তার মধ্যে উপভোক্তাকে দিতে হয় ৯০০ টাকা। বাকি টাকা যৌথভাবে দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

শৌচাগার তৈরি।

হাওড়া জেলায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে শৌচাগার তৈরি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। তাদের অভিযোগ, মজুরির টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন মহলে আবেদন সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি। আর এর জেরে জেলার অনেক শৌচাগার নির্মাণ থমকে গিয়েছে।

Advertisement

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন হাওড়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যাটির কথা শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ এলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানো হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য জেলার মতোই হাওড়াতেও মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে হাওড়া ‘নির্মল জেলা’র তকমাও পেয়েছে। এই প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির জন্য মোট খরচ হয় ১০ হাজার ৯০০ টাকা। তার মধ্যে উপভোক্তাকে দিতে হয় ৯০০ টাকা। বাকি টাকা যৌথভাবে দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শৌচাগার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির হাতে। শৌচাগার তৈরি শেষ হলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো টাকাই তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে উপভোক্তা হিসাবে তাঁদেরই বাছাই করা হয় যাঁদের নাম রয়েছে ২০১১ সালের সামাজিক অর্থনৈতিক সমীক্ষায়। কিন্তু সমীক্ষায় নাম নেই, এমন যাঁদের শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তাঁদের জন্য ১০০ দিনের প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। এক্ষেত্রেও টাকার বরাদ্দ একই।

নিয়ম অনুযায়ী, মজুরির টাকা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে যাওয়ার কথা। কারণ, যাঁর বাড়িতে এই শৌচাগার হচ্ছে তাঁর একশো দিনের প্রকল্পে জবকার্ড থাকতেই হবে। এবং শৌচাগার তৈরির জন্য শ্রমও দেবেন তিনি। ফলে দৈনিক ১৭২ টাকা মজুরি হিসাবে ১১ দিনের মজুরি তাঁকেই দেওয়া হয়।

কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, শৌচাগার তৈরিতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ফলে বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়। খাতায় কলমে দেখানো হয় উপভোক্তা নিজে কাজটি করছেন। উপভোক্তার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একটা অলিখিত চুক্তি থাকে। বলা হয়, জবকার্ডধারীর অ্যাকাউন্টে ওই টাকা গেলেও তা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে দিতে হবে। আর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেই টাকা দেবেন ওই দক্ষ শ্রমিককে।

আর জট পাকিয়েছে এই মজুরি নিয়েই। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কর্তারা জানান, কাজ শেষে ইমারতি দ্রব্যের ১৯০০ টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে আসে। কিন্তু উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা ঢুকলেও অনেকেই সেই টাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিতে চাইছেন না। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার জানান, একটি শৌচাগার তৈরি করে লাভ থাকে গড়ে পাঁচশো টাকা করে। এই অবস্থায় মজুরি বাবদ প্রাপ্য ১৯০০ টাকা যদি আদায় করা না যায় তাহলে লোকসান সামলানোও সমস্যার।

উদয়নারায়ণপুরের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের প্রকল্পে ২০০টি শৌচাগার তৈরি করেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিভিন্ন মহলে ধরাধরি করে জনা মাত্র পঞ্চাশজন উপভোক্তার কাছ থেকে মজুরির টাকা আদায় করতে পেরেছে ওই সংস্থা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা জানান, ‘‘আমরা বাকি টাকা পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি।’’

তিনি আরও জানান, বেগতিক দেখে উপভোক্তাদের কাছ থেকে নগদে ১৯০০ টাকা আগাম নিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। বলা হয়েছিল পরে তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকবে। কিন্তু সে কথা শুনেই উপভোক্তারা গোলমাল শুরু করে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিডিও জানান, পঞ্চায়েত সদস্যদের জানিয়েও সমস্যাটির সমাধান করা যাচ্ছে না। কারণ ভোটব্যাঙ্ক-এর ক্ষতি হওয়ার ভয়ে পঞ্চায়েত সদস্যরা মজুরির টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য উপভোক্তাদের চাপ দিতে পারছেন না। ১০০ দিনের প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সেলের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, সমস্যাটি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন