বাস রাস্তায় চলছে টোটো। —নিজস্ব চিত্র।
টোটোয় যাত্রী পরিবহণে লাগাম টানতে দু’সপ্তাহ আগেই নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল হুগলি জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেই সব বিধিনিষেধ উড়িয়ে জেলার প্রায় সবর্ত্রই টোটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে ফের বাস এবং অটো-চালকদের ক্ষোভ বাড়ছে। প্রশাসন দায়িত্ব চাপিয়েছে পুরসভার ঘাড়ে। পুরসভা আবার নতুন বোর্ড গঠনকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে সময় চাইছে।
একমাত্র চন্দননগরে জি টি রোডে সে ভাবে টোটো চলছে না। এ ছাড়া, জেলা সদর চুঁচুড়া, ব্যান্ডেল, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটি, কোন্নগর, উত্তরপাড়া— সর্বত্রই যত্রতত্র টোটো চলছে।
গত ২৫ মে জেলাশাসকের উদ্যোগে এক প্রশাসনিক বৈঠকে টোটোয় চার জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না, শহরের মূল সড়কে টোটো চালানো যাবে না, টোটো-চালকদের লাইসেন্স দেওয়া, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন-সহ কিছু নিয়ম এবং বিধিনিষেধ বলবৎ করা হয়। জেলা পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানান, এক সপ্তাহ টোটোর উপরে নজরদারি চালানো হবে। প্রচার করা হবে। তার পরেও টোটো নিয়ম ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু ওই সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। বিভিন্ন জায়গায় বাস ও অটোর রুটে টোটো চলতে দেখা যাচ্ছে। যানজটও তীব্র হচ্ছে। হুগলির আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সৈকত দাস বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে দিল্লি রোড, জিটি রোড বা জাতীয় সড়কে টোটো চালানো যাবে না। ওই সব রাস্তা বাদে আর কোন কোন রুটে অটো চলবে না, সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিকে তা নির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছে। তার পরেই পরিবহণ দফতর ওই রুটকে মান্যতা দেবে। অন্য যাত্রিবাহী গাড়ির সঙ্গে টোটোর বিরোধ কমবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, গোটা জেলায় একমাত্র চন্দননগর পুরসভা টোটো চলাচল অনেকটাই সফল ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। ওই পুর এলাকায় জিটি রোডে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাস, অটো বা ট্রেকারের রুটে যেন অটো না চলে সে ব্যাপারে নির্দেশিকা দিয়েছি আমরা। জিটি রোড ধরে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশের ব্যাপারে টোটো সংগঠনগুলিকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এই পদ্ধতি আরও নির্দিষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, রিষড়া, কোন্নগর, উত্তরপাড়ায় কিন্তু ছবিটা বদলায়নি এখনও। নতুন বোর্ড গঠনকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে সেখানকার পুর কর্তৃপক্ষ ওই নির্দেশিকা কার্যকর করার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু জেলার বাস-মালিক সংগঠনের কর্তা দেবব্রত ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে বটে, কিন্তু তাদের দায়বদ্ধতা আছে কি না, বুঝতে পারছি না। চন্দননগর পারলে অন্যত্র কেন টোটো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?’’
শাসক দলের জেলা নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, দলের স্থানীয় নেতারা যুক্ত থাকাতেই পুলিশ-প্রশাসন বেআইনি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে। জেলা বিজেপি নেতা স্বপন পালের অভিযোগ, ‘‘দিকে দিকে তৃণমূল নেতারাই যে যত ইচ্ছে রাস্তায় টোটো নামিয়ে দিচ্ছেন। কারণটা সহজেই অনুমেয়। প্রশাসন অবিলম্বে এতে লাগাম দিক।’’
লাগামহীন ভাবে টোটো চলতে থাকায় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা চিন্তিত। সৈকতবাবু জানান, আর যাতে নতুন করে টোটো কেনাবেচা না হয়, তা দেখা হচ্ছে। পুরসভাগুলিকেও এ ব্যাপারে প্রচার এবং নজর রাখতে বলা হয়েছে। টোটো-চালকরা জানান, এতে তাঁদের জীবিকার সংস্থান করেছেন। অনেকে শিক্ষিত যুবকে রিকশা চালাতে লজ্জা পান। তাঁরা টোটোতে স্বচ্ছন্দ।